অশুভ কাটিয়ে শুভর প্রার্থনা করব, মায়ের হাতে জমিয়ে খাব পোলাও-চিংড়ি: সাহেব ভট্টাচার্য
তিনি এখনকার হার্টথ্রব নায়ক এবং মিষ্টি স্বভাবের মানুষ। তাঁর নতুন নতুন লুকে প্রতিটা ছবিতে হাজার হাজার লাভ সাইন বয়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়ায়। একদিকে সুব্রত ভট্টাচার্যর ছেলে হিসেবে খেলার পরিবেশে বড় হওয়া আবার ছোট থেকেই শিশুশিল্পী হিসেবে সিনেমায় আত্মপ্রকাশ। এই করেই হয়ে উঠেছেন বাংলা ছবির সুদর্শন নায়ক। তিনি সাহেব ভট্টাচার্য। পুজো নিয়ে আড্ডা দিলেন দ্য ওয়ালের প্রতিনিধি শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে।
পুজো পরিক্রমার মজা
-পুজোয় প্রতিবার বন্ধুবান্ধবের সঙ্গেই দেখা হয়,গেট টুগেদার হয়। তবে এবার কী হবে সেটাই বলা যাচ্ছে না। আর পুজো মানেই পুজো পরিক্রমা। এখন তো আমাদের সচরাচর নিজেরা ঠাকুর দেখতে যাওয়া হয়না। সেটা আমরা পারিও না। বেশিরভাগ সময়েই পুজোর জাজিংয়ে বিচারক হওয়ার সূত্রে আমরা কলকাতার বড় বড় ঠাকুরগুলো দেখতে যাই। এবার সেটা কতটা হবে বা না হবে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছি।
পুজোর আড্ডা
তবে এবার হয়তো পরিবারের সঙ্গে একটু বেশি সময় কাটাব। ইভেন্টের ব্যস্ততা কম থাকবে। এছাড়া খুব কাছের বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে এবার নিশ্চয়ই দেখা হবে। প্রতিবছর ষষ্ঠী বা সপ্তমীতে আমার বাড়িতে একটা গেট টুগেদার হয়। যেখানে সব বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন আসেন। সেটাও এ বছর করার ইচ্ছে আছে কিন্তু অল্প সংখ্যক কিছু লোকজনকে ডাকতে পারব এই আবহে। এঁদের মধ্যে ইন্ডাস্ট্রির বন্ধুরাও আছেন।
পুজো মানেই রোল ঝালমুড়ি
পুজোর সময় রেস্টুরেন্টে গিয়ে খুব কমই খাই। পুজোর সময় অনেক খাবারই ভাল হয় না, তাই বাইরে খাওয়া কমই হয়। কিন্তু প্রতিবছর যেটা করি আমরা বন্ধুরা মিলে, যেমন ধরো দেশপ্রিয় পার্কে বা বালিগঞ্জ কালচারালের পুজোর আশেপাশে গিয়ে চিকেন রোল, চাউমিন, ঝালমুড়িও হতে পারে মাঝেমাঝে, ফুচকাটা খুব একটা পছন্দ করি না– রাতের দিকে গিয়ে এই স্ট্রিটফুডগুলো খাই, প্রচণ্ড এনজয় করি। সেইটা হয়তো এ বছর করতে পারব না। অত ভিড়ের মাঝে বাইরের খাবার খাওয়া ঠিক হবে না। বাড়িতে বাবা-মা রয়েছেন। স্ট্রিটফুডটা মিস করব।
পুজোর দুপুরে মায়ের হাতের রান্না
পুজোর সময় মা পুরো কিচেনের দায়িত্ব নিয়ে নেয়। সারাক্ষণই রান্না কী হচ্ছে খেয়াল রাখে। মা বলে, ‘বাড়িতে খাবার করব তোরা বাড়িতেই খাস। বাইরে থেকে খাবার অর্ডার করিস না।’ সেইটা নিয়ে নিশ্চিন্ত রয়েছি যে বাড়িতে ভাল ভাল খাবার হবে।
আমার যেমন মায়ের হাতের বাসন্তী পোলাও আর চিংড়ির মালাইকারি খুব প্রিয়। সেটা এক দিন হবে। অষ্টমীর দিন বা নবমীর দিন দুপুরবেলা একসঙ্গে বসে কষা মাংস আর ভাত হবে নিশ্চয়ই। পুজো মানেই বাঙালি খাবার। এগুলো বাড়িতে হবে, সেটা নিয়ে আমি খুবই খুশি, আনন্দিত।
শপিংয়ের বিলাসিতা চাই না
পুজোর কেনাকাটার ক্ষেত্রে আগে লোকে কিনে আমাকে দিত। এখন আমাদের উল্টো হয়ে গেছে। আমাদের কিনে দিতে হয় সবাইকে। এ বছর নিজের জন্য পুজোর জামা কাপড় কিনে আমি খরচ করতে চাইছি না, কারণ একটা খুব কঠিন সময়ের মধ্যে যাচ্ছি আমরা। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে এই বিলাসিতাটা না করলেও হয় আমার মনে হয়। আমরা তো বেশিরভাগই শপিং মল থেকে কিনি, কিন্তু যাঁরা গড়িয়াহাটে, নিউ মার্কেটে ব্যবসা করেন তাঁদের তো একটা উপার্জনের সময় এটা। আমি তাই এবার শপিং মল থেকে কিছুই কিনিনি বিলাসিতা করে।
পুজো আসুক শুভ বার্তা নিয়ে
পুজোটা এবার এমন সময় আসছে, যে সময়টা অন্যরকম। যেমন মহালয়ার একমাস বাদে পুজো হচ্ছে। এ বছর পুজোর একটা অন্য গুরুত্ব আছে। এ বছর মানুষ সামাজিক, অর্থনৈতিক ভাবে অবসাদে ও দুশ্চিন্তায় রয়েছে। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আমার মনে হয় দুর্গাপুজোর যে মূলমন্ত্র, সেটা অশুভ কাটিয়ে শুভর আবির্ভাব, অন্ধকার থেকে আলোর বার্তা– এইটাই হওয়া উচিত। খারাপ সময়টা কখনই চিরকাল থাকবে না। অন্ধকার রাত্রির শেষে শুভ সূচনার উজ্জ্বল ভোর আসবেই। সেই আশাটাই মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। সেই আশাটাই বলব রাখতে।
কলকাতায় লোকজনকে দেখে যা মনে হচ্ছে এবার পুজোতেও লাইন দিয়ে ঠাকুর দেখতে বেরোবে। আমার বার্তা এটাই, আপনারা সামাজিক দূরত্ব মেনে চলুন, স্যানিটাইজার, মাস্ক ব্যবহার করুন, সাবধানতা বজায় রেখে ঠাকুর দেখুন। ভাল থাকুন সকলে।