পার্লারের ঝুঁকি নয়, আকাশছোঁয়া খরচও নয়! পুজোর আগে ঝকঝকে হয়ে উঠুন রোজকার যাপনেই
কেয়া শেঠ
ঘরবন্দি জীবনের রেশ কাটতে না কাটতেই পুজো এসে গেছে। এই ক’দিন তেমন করে যত্ন নেওয়া হয়নি নিজের। এখন পার্লারে যাওয়াও হয়তো খুব একটা সেফ বোধ করছেন না। আবার ঘরে বসে অনেকক্ষণ ধরে রূপচর্চা করবেন, সেই সময়ই বা কোথায়। চিন্তা করবেন না, সমস্ত সমাধান রয়েছে আপনার চার দেওয়ালের মধ্যেই। কোথাও যেতে হবে না, কিচ্ছু আনতে হবে না। শুধু রোজকার কাজের মাঝেই একটু মাথা খাটাতে হবে। খুঁজে পাবেন, রূপচর্চার গুপ্তধন। যা এতদিন ফেলে দিয়েছেন অবহেলায়, তাই আপনাকে সতেজ ও ঝকঝকে রাখবে এই গৃহবন্দি দশায়।
যেমন ধরুন, ভাত তো প্রায় সকলের বাড়িতেই রান্না হচ্ছে। তো সেই ভাতের যে ফ্যানটা আমরা গেলে ফেলে দিই, সেটাই কাজে লাগানো যায়। ভাতের ফ্যানে একটু পাতিলেবু মিশিয়ে মাথায় মাখলেই চুলটা কিন্তু দারুণ কন্ডিশনিং করবে। খুসকি তো যাবেই নিয়মিত ব্যবহারে। তার পরে ধরুন আলু এখন আবশ্যিক আনাজ। কিন্তু সেদ্ধ আলুর খোসা ছাড়ানোটাই যে আপনার ম্যানিকিওরের কাজ করতে পারে, তা জানেন! সেদ্ধ আলু গরম জল থেকে তুলে খোসা ছাড়ানোর সময়ে আলুর খোসাটা গরম জলে মেশানো অবস্থায় হাতে ঘষে নেওয়া যায়, নরম চামড়া পাওয়া যাবে সহজেই। এখন তো বারবার স্যানিটাইজ়ার ব্যবহার করছি আমরা। ক্ষতি হচ্ছে হাতের চামড়ার। এক্ষেত্রে আলুর খোসা ছাড়ানো একটা দারুণ রূপচর্চা!
বাড়িতে চা করে ছাঁকার পরে ছাঁকার পরে পাতাটা ফেলবেন না। আলাদা করে আরও একটু ফুটিয়ে নিন। সেই দ্বিতীয় বার ফোটানো চায়ের জলটা স্নানের পরে মাথায় মাখাই যায়। অপচয়ও কম হল, রূপচর্চাও হল। শুধু তাই নয় চা পাতাটা এবার সুতির কাপড়ে পুঁটুলি করে বেঁধে ফ্রিজে রেখে দিন। চোখে সেঁক দিন ঘুমের আগে। খুব আরাম কিন্তু। এছাড়াও এখন যে এত উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, তাতে ঘুম ভাল হচ্ছে না অনেকের। চোখে ডার্ক সার্কেল পড়ছে। চায়ের পাতার ঠান্ডা সেঁক কিন্তু এক্ষেত্রে রীতিমতো ওষুধের কাজ করবে। যাঁরা বাড়িতে থেকে সারাদিন ল্যাপটপ বা মোবাইলে কিছু দেখছেন, তাঁরাও চোখের আরাম পাবেন এই টোটকায়। মাঝেমধ্যে চোখটা ৩০ সেকেন্ড চেপে ধরে বন্ধ রাখাও দরকার। সেটা অভ্যেস করে ফেলুন।
বাড়িতে লেবু খেলে, খোসাগুলো ঠান্ডা জলে ভাসিয়ে রেখে দিন। রাতের বেলা সেই লেবু জলটা ঘাড়ে-গলায়, হাতের তলায় দিয়ে ঘষে নিন। শীতল ফিলিং হবে একটা। লেবুর সুগন্ধীটাও বেশ অ্যারোমা ম্যাজিক হয়ে উঠবে। ঘুমও ভাল হবে।
অনেককেই অনভ্যাসে বেশি কাজ করতে হচ্ছে, কারও আবার উদ্বেগের সমস্যা বেশি। তাঁদের মাথা ধরে থাকে প্রায়ই। ভার হয়ে থাকে, বা ঝিমঝিম করে। মোটা দাঁড়ার কাঠের চিরুনি দিয়ে দিনে বেশ কয়েক বার অন্তত ২৫-৩০ বার চুল আঁচড়ান ভাল করে। মাথা ধরে থাকার সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে। রক্ত সঞ্চালন ভাল হওয়ায় চুলের গুণও ভাল হবে। এটা রোজই করতে পারলে ভাল, কিন্তু সাধারণ দিনে আমরা এত চুল আঁচড়ানোর সময় কোথায় পাই! এখন সময় পাওয়া গেছে, সেটা কাজে লাগানো হোক।
আর ধরুন, পাঁউরুটি বা রুটি তো একটা-দুটো বাঁচেই মাঝেমাঝেই। খেতে ভাল লাগে না সবসময়, ফেলেই দিতে হয় হয়তো। এক কাজ করুন। দুধ গরম করে, তাতে পাঁউরুটি বা রুটিটা ফেলে চটকে নিন। তাতে একটু চিনি মিশিয়ে ভাল করে গায়ে ঘষলে দেখবেন, খুব উপকার পাবেন। গায়ের লোমকূপের ময়লাগুলোও উঠে আসবে। ব্র্যান্ডেড বডিওয়াশে নিয়মিত স্নান করলে যা হয় না, তাই হয়ে যাবে এই মিশ্রণের ব্যবহারে। এই মিশ্রণের দুধটা ময়েশ্চারের কাজ করবে আপনার স্কিনে। চিনিটা স্ক্রাব করবে চামড়া। পাঁউরুটি ভেজাটা ময়লা তোলার কাজ করবে। নিজের স্কিন এত ভাল পরিষ্কার হবে, দেখে চমকে যাবেন।
শুধু পরিষ্কারই বা কেন, আমরা তো বডি পলিশও করি অনেক সময় শখ করে। কিন্তু সেটাই যদি এই অবসরে মাঝে মাঝেই করা যেত ঘরে! কঠিন নয় কিন্তু। করতেই পারেন প্রায়ই। অনেক সময়ে কলা থাকে ঘরে, পেকে যায় বেশি। সেই পাকা কলায় সুজি মিশিয়ে ভাল করে ঘষে ঘষে চামড়ায় লাগান। তার পরে ধুয়ে ফেললে দেখবেন, কেমন চকচক করছে স্কিন! হয়তো কয়েক দিন নিয়মিত এইটা করার পরে পার্লারকেও হার মানাবে। আর তার উপর সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ও নিরাপদ উপায়। সবরকম স্কিনের জন্য এটা কাজ করবে। কোনও ক্ষতি হবে না। মুখেও করতে পারেন, আলতো করে। বেশি না ঘষে। সুন্দর উজ্জ্বল হবে স্কিন।
নাকের ব্ল্যাকহেডসগুলো বেড়ে গেছে কি? ছোট্ট ছোট্ট লোম দেখা যাচ্ছে? এক কাজ করুন, সাবু ফোটান একটু ঘন করে। তার পরে ঠান্ডা হলে, খুব অল্প উষ্ণ অবস্থায় নাকের উপর ভাল করে লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে গেলে টেনে তুলুন সাবুর স্তরটা। দেখবেন ব্ল্যাকহেডস আর ছোট লোম– দুই-ই উঠে গেছে। এই মিশ্রণ গোটা মুখেও লাগাতে পারেন, তবে বেশি শুকোতে দেবেন না। তার পরে ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে হাল্কা ময়েশ্চারাইজ়ার, ব্যস।