সুবর্ণ জয়ন্তীতেও নেই জৌলুস, ‘বিজয়া’র আরাধনায় ক্ষিদিরপুর শিবতলা অমর সংঘ
দক্ষিণ কলকাতার ক্ষিদিরপুর শিবতলা অমর সংঘের এ বছর সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ষ। গত বছর পুজো শেষের পর থেকেই এক প্রকার ৫০তম বর্ষের ভাবনা শুরু হয়ে গিয়েছিল তাঁদের। শিল্পী সঞ্জয় দাসের সঙ্গে বৈঠকের পর বৈঠক করে ফেব্রুয়ারি মাসেই চূড়ান্ত হয়ে যায় মহার্ঘ্য থিম। কিন্তু, তার পরেই সব কিছু ওলটপালট হয়ে যায়।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ অনেকেরই অনেক স্বপ্ন চুরমার করে দিয়েছে। এই মহামারীর শেষ কোথায় তার এখনও কোনও দিশা মেলেনি। এমন কঠিন সময়ে ভেঙে পড়া স্বপ্নগুলোকেই আবার একটু একটু করে জোড়া লাগাতে শুরু করেছে মানবজাতি। কলকাতার শারোদৎসব তার অন্যতম প্রমাণ। করোনা সংক্রমণের চোখরাঙানিকে সঙ্গে নিয়েই ধীর গতিতে চলছে বাঙালির সেরা পার্বণের প্রস্তুতি।
এদিকে মহামারীর সঙ্গে থাবা বসিয়েছে অর্থনৈতিক সংকট। লকডাউনের জেরে কলকাতা সব পুজো কমিটির সঙ্গে শিবতলা অমর সংঘের বাজেট কমেছে প্রায় ৬০-৭০ শতাংশ। শিল্পী সঞ্জয় দাসকে কমিটির কর্তাব্যক্তিরা অনুরোধ করেন আগের থিমের বদলে স্বল্প সাধ্যের মধ্যে নতুন কিছু ভাবার।
পুজো কমিটির উদ্যোক্তাদের অনুরোধকে মান্যতা দিয়ে সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ষের পুজোয় শিল্পী সঞ্জয় হাজির হয়েছেন থিম- ‘বিজয়া’ নিয়ে। কি থাকবে ‘বিজয়া’য় ? এমন প্রশ্নের জবাবে শিল্পী বলেন, “দেবী দুর্গার ১০৮টি নামের একটি হল বিজয়া। যিনি সর্বদাই বিজয়ীনি। অসুরদলিনী মা-কে আজ আমাদের বড় প্রয়োজন। আমরা তো তাঁর সন্তান। এই সংকটময় পরিস্থিতিতে সন্তানরা কেবল মায়ের দ্বারস্থ হতে পারে। তাই এখানে আমরা বিজয়ার আহ্বান জানিয়ে করোনার মতো অসুরকে বধের প্রার্থনা করব।”
বিজয়া থিমের সজ্জায় শিল্পী ব্যবহার করছেন মাস্ক। করোনা কালে মাস্ক ও স্যানিটাইজার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেই ভাবনা থেকেই মণ্ডপের আঙ্গিকে ব্যবহার করা হচ্ছে এই সমস্ত বিষয়গুলি। পাশাপাশি মণ্ডপ সাজের মাধ্যমে কুর্নিশ জানানো হবে দেশের করোনা যোদ্ধাদের।
এ প্রসঙ্গে অবশ্য সাসপেন্স বজায় রাখতে চান শিল্পী সঞ্জয় দাস। তিনি বলছেন, “কোভিড সংক্রমণের শুরু থেকেই স্যানিটাইজার ও মাস্ক আমাদের সঙ্গী। কিন্তু মনে রাখতে হবে, যাবতীয় ভয়কে উপেক্ষা করে চিকিৎসক, স্বাস্থ্য কর্মী, পুলিশরা লড়াই করেছেন। প্রাণ দিয়েছেন। তাঁদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। তাই আমার মন্ডপের বিশেষভাবে তাদের প্রতি কুর্নিশের একটি অধ্যায় থাকবে।”
এখানে প্রতিমা গড়ছেন মৃৎশিল্পী গৌরব পাল। সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ষের পুজোয় জৌলুসহীন হওয়ায় কিছুটা বিমর্ষ পুজো কমিটির কর্তারা। এ প্রসঙ্গে পুজো কমিটির অন্যতম কর্তা সনতন মিশ্রা বলেছেন, “৫০তম বছরের পুজোর উদযাপন নিয়ে আমাদের যুবা সদস্যদের মধ্যে একটা উচ্ছ্বাস ছিল। কিন্তু করোনা ভাইরাস ও লকডাউনের জেরে যেভাবে আমরা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি, তাতে ছোট পুজো করা ছাড়া উপায় নেই। তাই আপাতত ধার্য্য করা পুজোর বাজেট এর থেকে ৭০ শতাংশ বাদ দিয়েই আমাদের এবারের পুজো করতে হচ্ছে।”