পুজোয় উষ্ণতা ছড়াবে স্কার্ট, ফুরফুরে ফ্লোরাল বা স্মার্ট হাই-ওয়েস্টে চুঁইয়ে পড়বে গ্ল্যামার
নারীর ফ্যাশন মানে শুধু চেহারার সঙ্গে মানানসই আভিজাত্য নয়। মনের রুচিও বটে। সেই সঙ্গে পরিবেশ, পরিস্থিতি, আবহাওয়া সবকিছুর মিশেলে যুগের সঙ্গে সঙ্গে ফ্যাশনের ঘরানাও বদলায়, নতুন স্টাইল স্টেমেন্টে অনন্যা হয়ে ওঠে নারী। তবে হালফিলের ফ্যাশনে এই যুগভেদ বা সময়ভেদের সীমারেখাটা নেই। প্রাচ্য আর পাশ্চাত্য কবেই মিলেমিশে ফিউসন হয়ে গেছে সেই কবেই। নতুন আঙ্গিকে পোশাকের সঙ্গে মুক্ত মনের মিল হয়েছে, সেখানে দেশকালের ভেদাভেদ নেই। ফ্যাশনের এটাই হল মোদ্দাকথা।
নানা যুগের নানা কথা। নানা বিশেষত্ব। সেই সঙ্গেই ফ্যাশনের পালা পদল। তবে পুরনো বা রেট্রো ফ্যাশনকে নতুন করে সাজিয়ে তুলে আজকের নারীর সঙ্গে মানানসই করে তোলাও একটা আর্ট। সেই কাজই করে থাকেন এখনকার ফ্যাশন ডিজাইনাররা। আর পুরনো বদলে স্কার্ট বা টাউজারের চল সে যুগেও ছিল এ যুগেও আছে। আর কুড়ির এই বছর তো এক ভয়ঙ্কর যুদ্ধের। পার্টি-অনুষ্ঠান বন্ধ। বাঙালির দুর্গাপুজোর গন্ধে চারদিক ম ম করলেও আতঙ্কের এই প্রহরে ঝলমলে ফ্যাশন নিয়ে মাতামাতি কিছুটা কম। এখন জমকালো পোশাকে নজর টানার চেয়ে ‘সিম্পল’ ডিজাইনার পোশাকই বেছে নিচ্ছেন মেয়েরা। বরং বলা যায় অকেশন-ওয়্যারের চাহিদা এখন কমেছে, বদলে বেড়েছে এসেনশিয়াল-ওয়্যারের প্রয়োজনীয়তা। করোনা কালে ওয়াড্রব সাজানোর জন্য মেয়েরা বেছে নিচ্ছেন এমন পোশাক যা ট্রেন্ডিও হবে আবার অফিস-মিটিং-কর্পোরেট লুকেও হবে পারফেক্ট। সে দিক থেকে স্কার্ট অনেক বেশি এগিয়ে।
ফ্যাশন ডিজাইনার অভিষেক দত্ত বললেন, “নান রকম প্রিন্টেড স্কার্ট, তার সঙ্গে ম্যাচিং স্কার্ফ সুদিং লুক আনবে। এবারে ফ্যাশনে স্কার্ফের চাহিদাও বেড়েছে। ভারী জাঙ্ক জুয়েলারির চেয়ে প্রিন্টেট স্কার্ফ গলায় জড়িয়ে নিলে অনেক বেশি চার্মিং লুক আনবে।”
স্কার্টের সে কাল-এ কাল
৩৯০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে স্কার্টের প্রচলন হয় আরমানিয়ায়। সে সময় স্কার্ট নারী ও পুরুষ উভয়েরই পোশাক ছিল। দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া, আয়ারল্যান্ডে স্কার্টের চল বেশি। তবে উনবিংশ শতক থেকে সারা বিশ্বেই স্কার্টের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে। পশ্চিমী সংস্কৃতি দখিনা হাওয়ার মতো বাঙালির ওয়াড্রোবেও সেঁধিয়ে যায়। প্লাস সাইজ হোক বা ছিপছিপে কোমরের তন্বী, স্কার্ট মানেই সেক্সি লুক, স্মার্ট আউটফিট। সময়ের বদলের সঙ্গে স্কার্টের পুরনো ও নতুন ট্রেন্ডেও মিলমিশ হয়েছে। সেই আঠারো শতকে স্টিলের ফ্রেমে বসানো ভারী ক্রিনোলিন তথা বিশালাকৃতি ঘের দেওয়া স্কার্ট বা ড্রেসের বদলে এখন ঘের দেওয়া হাল্কা স্কার্টেই বেশি স্বচ্ছন্দ জেন ওয়াই। ১৯১০ সালে এক কোমর ঘেরের পরতে পরতে জড়িয়ে থাকা কাপড় গোড়ালির কাছে টাইট করে হাবল স্কার্টের যে প্রচলন হয়েছিল তা এখনও আছে এবং নতুন স্টাইলে। মিনি স্কার্ট বললেই মেরি কোয়ান্টের নাম মনে পড়ে। ষাটের দশকে গোড়ালি ঝুল কাপড়কে ছোট করে উন্মুক্ত দুই পায়ে নারীর লজ্জাজড়ানো ফ্যাশনকে স্বাধীনতা দিয়ে যে পোশাকের চল এনেছিলেন মেরি, তা আজকের যুগে আধুনিকাদের স্টাইল স্টেটমেন্ট।
এখন দেখে নেওয়া যাক, হালফিলের ট্রেন্ডে জেন ওয়াইয়ের পছন্দ ঠিক কেমন।
হাঁটু ঝুল ফ্লোরালে সেক্সি বয়ঃসন্ধি, প্রিন্টেড লঙে স্মার্ট মধ্য চল্লিশ
শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা ফ্লোরাল স্কার্টে মন মজেজে বয়ঃসন্ধির। নানা রঙের ফ্লোরাল এখন আর পশ্চিমী দুনিয়ার ট্রেন্ড নয়, ভেতো বাঙালির আলমারির আভিজাত্যও বটে। বিয়ের অনুষ্ঠান হোক বা পুজোর ফ্যাশন, ভারী বেনারসীর চেয়ে ছিমছাম ফ্লোরালেই স্মার্ট কমবয়সীরা, লুকে সেক্সিও বটে। আর ফ্লোরাল প্রিন্টের স্কার্টের সঙ্গে সুতি, জর্জেটের একরঙা টপ, সঙ্গে একটা রঙচঙে স্কার্ফ আর কি চাই! পুজোজ মেজাজ একেবারে তৈরি। টপের হাজারো ডিজাইন তো রয়েইছে। বোট নেক বা পিঠে ফিতে বাঁধা টপেরও ভালই চাহিদা আছে। অনেকে রঙচঙে শার্টেও তৈরি করছেন ফ্যাশন স্টেটমেন্ট।
স্কার্ট কেনার আগে ফিটিংসের ব্যাপারে একটু হিসেবনিকেশ করে নেওয়াই ভাল। চেহারা একটু ভারীর দিকে হলে ফ্লেয়ারড স্কার্ট বেশ মানানসই। স্কার্টে খুব ঘন, গাঢ় প্রিন্ট থাকলে একেবারে সাদামাঠা টপেই বেশ ভাল জমে। যেহেতু ফ্লোরাল স্কার্টে একাধিক রং থাকে, তাই বেশ কয়েক ধরনের টপের সঙ্গেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পরা যায়। ঢিলেঢালা স্কার্টের সঙ্গে স্কিন-ফিট টপ বেছে নিলে দেখতে খুব স্মার্ট লাগে। লং স্কার্টের খুব চাহিদা রয়েছে এ বার। মধ্য চল্লিশের মহিলাদের কথা ভেবে র্যা পারের মধ্যে মধুবনী, আজরক (রাজস্থানী প্রিন্ট) প্রিন্ট খুব চলছে। রয়েছে জিওমেট্রিক, ফ্লোরাল (ফুল, পাতা) ওয়ারলি (হিউম্যান ফিগার) প্রিন্টও। মফঃস্বলের মাঝবয়সিদের মধ্যেও লং স্কার্টের চাহিদা বাড়ছে। পকেটে জোর থাকলে কাঁথা স্টিচ করা বা কলমকারি আর খেস মেশানো কাপড়ের স্কার্টও কিনতে পারেন। সেক্ষেত্রে বাংলার হাতে গড়া নকশার ছোঁয়া আর পশ্চিমী ধরন দুই থাকবে।
ভারী গড়নে মেদ চাপা দেয় হাই ওয়েস্ট
হাই ওয়েস্ট স্কার্টের খুব চল এখন। মনে আছে শাহিদ-ঘরণী মীরা রাজপুত তাঁর রিসেপশনের দিনে ফুলেল প্রিন্টের এমব্রয়ডারি করা নীল স্কার্টে শিহরণ জাগিয়েছিলেন। ওপরে পরেছিলেন ক্রপ টপ। বিয়ের অনুষ্ঠানেও হাই ওয়েস্ট সেই এমব্রয়ডারি স্কার্টে নতুন ফ্যাশন স্টেটমেন্ট এনেছিলেন মীরা। বলি সুন্দরী আলিয়া ভাট থেকে দীপিকা পাড়ুকোন, হাই ওয়েস্ট স্কার্টে ফ্যাশন ম্যাগাজিনের মুখ হয়ে উঠেছেন অনেকেই। ঘের দেওয়া হাই ওয়েস্ট স্কার্টে হিপের মেদ ঢাকে সুন্দরভাবে, প্লাস সাইজের কোমর মাপের খুঁতগুলোও চাপা পড়ে যায়। একটা স্মার্ট লুক নিয়ে আসে, আত্মবিশ্বাসও বাড়ে। চেহারা পাতলা হলে ফিটেড হাই ওয়েস্ট পেন্সিল স্কার্ট বেশ জমাটি। কোমর আর অ্যাবসের মোহময়ী রূপ ফুটিয়ে তোলে যত্ন করে।
সাদা শার্ট, ডেনিম শার্ট আর সলিড কালারের অফ শোল্ডার টপও খুব ‘ইন’ এখন। স্কার্টের সঙ্গে কনট্রাস্ট রঙের টপই বেশ খোলে। সাদা-কালো বা লাল-হলুদ রঙের কনট্রাস্ট বরাবরই জনপ্রিয়।
লেদারের আদরে
প্রিমিয়ার হোক বা রেড কার্পেট বা পার্টি, সর্বত্রই চলতে পারে লেদারের সাজ। কোনও দিন লেদার আউট অফ ফ্যাশন ছিল না। এখনও নয়। বেশি দামের লেদারে পকেটে টান থাকলে, নকল লেদারের ফ্যাশনওয়্যার কেনা যেতেই পারে। লেদারের পেন্সিল স্কার্ট সব চেয়ে বেশি জনপ্রিয়। এর সঙ্গে শিফনের ব্লাউজ বেশ যায়। লেদারের স্কার্টের সঙ্গে ক্রপ টপও পরা যায়। তবে এ ক্ষেত্রে স্কার্ট হবে হাই ওয়েস্টেড। লেদারের লুকে স্পোর্টস জুতোও ভাল মানায়। তবে তখন সঙ্গে পরতে হবে টি শার্ট।
লেদারের প্রিন্টও পুরনো হয় না কখনও। লেপার্ড প্রিন্ট, স্ট্রাইপ, স্পট, পোলকা ডট—আজকের মেয়েদের পছন্দের লিস্টে রয়েছে। তা ছাড়া শিফন, সিল্ক আর লেসের কাপড়ও লেদারের সঙ্গে মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ করে পরা যায়। এবারের পুজোয় মাস্ক যখন অ্যাকসেসরিজ, তখন চলুক না স্মার্ট লেদার—পেন্সিল লেদার স্কার্টের সঙ্গে হিল জুতো, গলায় ডিজাইনার স্টেটমেন্ট নেকলেস আর হাতে টাইটান, একেবারে মাখোমাখো হয়ে যাবে এবারের পুজো।