সপ্তমীতে সিল্ক, দশমীতে চান্দেরি, শাড়ির চমকে মাতিয়ে দিন পুজো
চৈতালী চক্রবর্তী
“আঙিনাতে যে আছে অপেক্ষা করে
তার পরনে ঢাকাই শাড়ি, কপালে সিঁদুর”
জিনস-টপ-কুর্তির ভিড় ঠেলে বঙ্গললনা আজও শাড়িতেই মোহময়ী। বছরভর পালাজো, হট প্যান্ট, ওয়ান শোল্ডার গাউনের ফ্যাশন তো লেগেই থাকে। সময় বদলায়। পুজোর ফ্যাশনেও নতুনত্ব আসে। কিন্তু শাড়ির বাজার কখনও পুরনো হয় না। অষ্টমীর সকালের অঞ্জলি হোক বা দশমীতে মাকে বরণ, শাড়ি চাই-ই চাই। ঢাকাই, বালুচরি, কাঞ্জিভরম থেকে আধুনিক লিনেন, মসলিন, হ্যান্ডলুম ওয়াড্রোবে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মিলমিশ হলে তবেই পুজো কমপ্লিট।
পুজোর শাড়ি মানেই ট্রাডিশনাল ফ্যাশন, এই ক্যাপসন এখন একেবারে সেকেলে। তাঁতের শাড়ি বললেই ঠোঁট উল্টে ফেলে জেন ওয়াই। পুজোয় ভারী তাঁত বা বেনারসী, জাস্ট ইমপসিবল! সরস্বতী পুজোয় না হয় তাঁতের দিকে ফিরে তাকানো যেতে পারে। তবে দুগ্গাপুজোর অষ্টমী বা নবমীর সন্ধে মানেই সিল্ক, শিফন বা জর্জেট ছাড়া কিছু ভাবা যায় না। স্টাইল স্টেটমেন্টে ইন হ্যান্ডলুমের শাড়িও। হেভি সিল্ক, মধুবনী পেন্টিং, জুট-চান্দেরির কম্বিনেশেরও কদর খুব।
পুজোয় চাই এক্সক্লুসিভ! আদি মোহিনী মোহনের কাঞ্জিভরম না আদি ঢাকেশ্বরীর সিল্ক
“এবারে সিল্কই বেশি চলছে। দোকানে যাঁরাই আসছেন রকমারি সিল্কই দেখতে চাইছেন। কমবয়সীদের ফ্যান্সি সিল্কই বেশি পছন্দ”, বললেন আদি মোহিনী মোহন কাঞ্জিলালের এক বিক্রেতা। কাঞ্জিভরম, কাঞ্চিপুরম বা মোহিনী মোহনের ট্রেডমার্ক ঢাকাই শাড়ির কদর যে নেই তা নয়, তবে নাইলন বা পলিয়েস্টারের হাল্কা বুননে অরগ্যাঞ্জা সিল্ক বা ফ্যান্সি সিল্কের চাহিদা এবার একটু বেশি।
আদি ঢাকেশ্বরী বস্ত্রালয় এক কথায় সিল্ককেই সেরা সার্টিফিকেট দিল। দক্ষিণী সিল্ক, ফ্যান্সি, গাড়ওয়াল, চান্দেরি সিল্কেরই নাকি রমরমা বাজার। আসলে মা-জেঠিমাদের ভারী শাড়ি আর পছন্দ নয় জেন ওয়াইয়ের। তার চেয়ে বরং ওয়াড্রোবে থাকুক চান্দেরির ওপর বেনারসির বুটি দেওয়া শাড়ি। যা এক কথায় গর্জাস লুক দেবে। আবার বেনারসির মতো ভারীও হবে না। আজকাল বেনারসির স্টাইলে চান্দেরির পাড় বা আঁচল হচ্ছে, দশমীর সন্ধ্যায় সিঁদুর খেলায় চান্দেরিতেই সেক্সি হয়ে উঠছেন তন্বী তনয়ারা।
শাড়ির দুনিয়ায় কণিষ্কের ফ্যাশনেরও বেশ নাম। বিক্রেতা বললেন, লিনেন, হ্যান্ডলুম, ব্লক প্রিন্টের শাড়ি এবার বেশ চলছে। শিফন, ক্রেপ, জর্জেটের শাড়িরও কদর রয়েছে বেশি।
কোসা সিল্কের ওপর বেনারসির পাড় বা বেনারসির মতো আঁচল দেওয়া শাড়িরও চলছে খুব। কোনওটার পাড় আড়াই ইঞ্চি, তো কোনওটায় আবার চার থেকে পাঁচ ইঞ্চি। কনট্রাস্ট ব্লাউজ দিয়ে এই শাড়ি জমে যাবে। হ্যান্ডলুম-সিল্কের মিক্স শাড়িরও চল হয়েছে এবার। বালুচরি, ঢাকাই, কাঁথা স্টিচ, মণিপুরী জুট সিল্ক, ঘিচা সিল্কের পাশাপাশি বাজার মাতাচ্ছে সাবেক সুতির শাড়িও।
একঘেয়ে ব্লাউজ নয়, শাড়িকে দিন ব্র্যান্ড লুক
লকডাউনে দোকানপাট বন্ধ। তাড়াহুড়োতে ব্লাউজ বানানো হয়নি। তাতে কুছ পরোয়া নেই। শাড়ির সঙ্গে আর একঘেয়ে ব্লাউজ পছন্দ করছে না জেন-ওয়াই। বরং শাড়ির সঙ্গে বেছে নিচ্ছে ট্রেন্ডি জ্যাকেট। ফ্যাশন ডিজাইনার অভিষেক দত্ত বললেন, এবার হয় ফুল-স্লিভ ব্লাউজেই বেশি সাজবেন বঙ্গ তনয়ারা না হয় শাড়ির সঙ্গে কনট্র্যাস্টে পরবেন জ্যাকেট ব্লাউজ। অষ্টাদশীদের জন্য সুতির শাড়ির সঙ্গে সলিড কালারের রেসার ব্যাক টি-শার্টও এবারের স্টাইল স্টেটমেন্টে ইন। অভিষেক বললেন, পুজোতে এক্সপেরিমেন্টাল ফ্যাশনের দিকেই ঝুঁকছেন মহিলারা। টিভি সিরিয়াল বা সিনেমা দেখেই শাড়ির জন্য তুলে আনছেন পছন্দের কুর্তি বা জ্যাকেট। যেমন পাটলিপাল্লু শাড়ির সঙ্গে ম্যাচিং ব্লাউজ নয়, চিকনের কুর্তিই পছন্দ কমবয়সীদের। শাড়িটা পরতে হবে সামনে আঁচল দিয়ে।
ত্রিশ থেকে চল্লিশের পছন্দ কোমর পর্যন্ত কুর্তি বা কোটি ব্লাউজ। অভিষেক বললেন, বোলেরো জ্যাকেট আপনার রোজকার লুকে একটা নতুনত্ব আনবেই। তবে বয়সজনিত অবাঞ্ছিত মেদ ঢাকতে একটু লম্বা ঝুলের কোটও পরা যায়। তাতে সৌন্দর্যের এতটুকু কমতি হবে না। তবে শাড়ি যেন অবশ্যই কনট্রাস্ট কালারের হয়। অভিষেক বললেন, হ্যান্ডলুম, কটন সিল্ক বা যে কোনও টেক্সচারের শাড়ির সঙ্গেই এই জ্যাকেট ব্লাউজ খাপ খেয়ে যায়। তবে এবারের পুজোর ফ্যাশনে লিনেন শাড়িরও চল হয়েছে বলে জানালেন অভিষেক। হালকা রঙের আঁচল বা জিওমেট্রিক ডিজাইনে নতুন স্টাইল স্টেটমেন্ট হয়ে উঠতে পারে জেন-ওয়াই।
ষষ্ঠী থেকে দশমী কোন দিনের কী সাজ
ষষ্ঠীর সকাল- নরম ঢাকাই জামদানির সঙ্গে ব্রোকেডের ব্লাউজ।
ষষ্ঠীর সন্ধে- কোসা সিল্কের ওপর বেনারসির পাড়,সঙ্গে কনট্রাস্ট ব্লাউজ জমে যাবে।
সপ্তমীর সকাল– কাঁথাস্টিচের সঙ্গে স্লিভলেস ব্লাউজ চলতে পারে, সঙ্গে কুন্দনের সেট হলে বেশ মানাবে।
সপ্তমীর সন্ধে- জারদৌসির সঙ্গে নুড মেকআপ, সঙ্গে হাল্কা অ্যাকসেসরিজ।
অষ্টমীর সকাল- শাড়ির সঙ্গে জ্যাকেটের কম্বিনেশন থাক, সকালের অঞ্জলিতে নজর টানতে বাধ্য।
অষ্টমীর সন্ধে- বালুচরী চলতে পারে, সাজে গর্জাস লুক চাইলে বালুচরীর ব্যাগও ঝুলিয়ে নিতে পারেন, কাঞ্জিভরম, ট্রাডিশনাল সিল্কও চলতে পারে।
নবমীর সকাল- লিনেন, সঙ্গে মানানসই গয়না, হাত খোঁপায় ফুল লাগাতে পারেন।
নবমীর সন্ধে- ক্লাসি লুক চাইলে হ্যান্ডলুম মাস্ট, খুব জমকালো কিছু না বেছে পরে ফেলুন ট্র্যাডিশনাল লুকের গয়না।
দশমীর সকাল- মেখলায় সাজতে পারেন।
দশমীর সন্ধে- সিঁদুর খেলা মানে গরদের শাড়ি, গ্লসি লুক পেতে বেছে নিতে পারেন হল্টার টপ, সঙ্গে সোনার হাল্কা সাজ জমে যাবে।