ভিলেন যখন করোনাসুর, ফোরফ্রন্টে ‘ইন’ লিনেন
চৈতালী চক্রবর্তী
গরমের ফ্যাশনে সুতিকে ওভারটেক করে ফ্রন্টে এখন লিনেন। গত কয়েক বছর ধরে ছিমছাম, কমফর্টেবল স্টাইল স্টেটমেন্টের মুখ হয়ে উঠেছে লিনেন। প্যাচপ্যাচে গরমেও হাল্কা লিনেনের বুননে বেশ হাওয়াবাতাস খেলে। আরামদায়ক তো বটেই। উপরি পাওনা উদ্ভিজ্জ উপাদানে তৈরি পরিবেশ-বান্ধব। সোজা কথায় বলতে গেলে ‘ইকো-ফ্রেন্ডলি ফ্যাশন’ । আর করোনা যখন ভিলেন, তখন ভারী, গুরুগম্ভীর রাজকীয় সাজের থেকে গ্রিন ফ্যাশনেই বেশি ভরসা রাখছেন জেন এক্স-জেন ওয়াই।
আইটি-সেক্টরের ঝকঝকে তরুণী রেশমি তো বলেই ফেললেন, “করোনা নিয়ে ভাবছি না। আর গরম ফরম অত দেখি না। যে পোশাক আমি ক্যারি করতে পারব আবার দেখতেও হবে চনমনে, পুজোর সাজ হোক বা ঠিকঠাক স্টাইলিং করলে পার্টিতেও পরা যাবে, সেটাই পছন্দ।” আন্তর্জাতিক ফ্যাশনের ব়্যাম্পেও ভালই চলছে লিনেন। ঢিলেঢালা স্টাইলের আরামদায়ক পোশাকই তো এখন সুপারহিট। মিডিয়া প্রফেশনাল সোফিয়া সেন। বললেন, “এখন তো করোনার জন্য ওয়ার্ক-ফ্রম হোম। এর আগে সারাদিন দৌড়ে বেড়ানো। তাই জমকালো পোশাক কেনা কবেই ছেড়ে দিয়েছি। ক্যাজুয়াল ওয়্যারই বেশি ভাল লাগে। পার্টি বা উৎসব-অনুষ্ঠানের জন্য বেছে রাখি কটনের শর্ট ড্রেস বা লিনেনের লুস-ফিট ট্রাউজারস। প্রিন্টেড লিনেনের ড্রেসও আমার কালেকশনে থাকে। যে কোনও উৎসবেই বেশ মানিয়ে যায়।” লিনেনের সাজে চড়া মেক-আপেরও দরকার নেই। গয়নাগাটিরও বেশি দরকার নেই। ক্রিস্টালের লকেট, নয়তো কানে লম্বা একটা জোড়া দুল, নয়তো ছোট্ট হিরের টপ, সাজ কমপ্লিট। মুক্তোর এক ছড়া হার বা মোটা চেনও পরা যায় শর্ট ড্রেসের সঙ্গে।
সকাল-সন্ধে হাল্কা রঙ, রিফ্রেশিং লুক আনবে
দিনের বেলায় হালকা সবুজ, হালকা হলুদ, পিচ রঙ বা সাদা প্যাস্টেল শেডের পোশাক বেশ মানিয়ে যাবে। অনেকে আবার গ্রিন-ফ্যাশন মানেই ভাবেন ম্যাড়ম্যাড়ে, রঙের উজ্জ্বলতা কম। কিন্তু লিনেনে যে কোনও রঙ আর কাটিংই ইন। যদি পোশাকে উজ্জ্বল রঙ চান, তাহলে নকশা বা ফ্যাব্রিক হাল্কা হলেই ভাল। আর হালকা রঙ পছন্দ হলে নকশা হতে পারে ফ্লোরাল বা জিওমেট্রিক। সন্ধের সাজে গাঢ় পিঙ্ক, চেকড বা স্ট্রাইপড ডিজাইনের লিনেনে নজর কাড়তে বাধ্য। আর লিনেন তো এখন কমবয়সিদের পছন্দ শুধু নয়, পঞ্চাশের মহিলাও দিব্যি লিনেনের প্রিন্টেড স্কার্ট বা ট্রাউজার্সে বেশ স্বচ্ছন্দ। আর শাড়ি তো আছেই। মজবুত পরিবেশবান্ধব ফেব্রিক দিয়ে তৈরি সহজে ছেঁড়ে না, রঙ ওঠে না। সাস্টেনেবল ফ্যাশনে তাই লিনেন সবসময়েই ইন।
ফ্যাশন ডিজাইনার অভিষেক দত্ত বললেন, “এবারে একটু হাল্কা, ছিমছাম পোশাকই বেশি চলছে। খুব বেশি টাইট ফিটিংস বা শরীরে চেপে বসা পোশাকের বদলে লিনেন বা কটনের হাল্কা পোশাকই বেছে নিচ্ছেন লোকজন।”
প্রিন্টেড ইন্দো-ওয়েস্টার্ন থেকে কলমকারি, লিনেনে ফ্যাশনিস্তা জেন-ওয়াই
কাফতান এখন খুব চলছে। গতবারের ফুজোর ফ্যাশনেও কাফতান বেশ মনে ধরেছিল কমবয়সিদের। আর এবার যেহেতু একটু হাল্কা পোশাকেই বেশি জোর দিচ্ছেন ফ্যাশন ডিজাইনাররা, তাই পুজোর সকাল হোক বা সন্ধে প্রিন্টেড ইন্দো-ওয়েস্টার্ন কাফতান ড্রেস চলতেই পারে। গাঢ় নীল বা গোলাপি লিনেনের কাফতান বেশি মানিয়ে যাবে। এর সঙ্গে অক্সিডাইজড গয়না মানানসই। অভিষেক বললেন, “কাফতান, ম্যাক্সি ড্রেস এখন ফ্যাশনে ইন। যেহেতু এবারের পুজোতে কাছাকাছির মধ্যেই ঘোরা হবে সবচেয়ে বেশি তাই জমকালো পোশাকের চেয়ে কমফর্টের দিকেই বেশি নজর দেওয়া হচ্ছে।”
পঞ্চমী বা ষষ্ঠীর সকালে হালকা লাইম গ্রিন বেলস্লিভ লং কুর্তির সঙ্গে প্রিন্টেড স্কার্ট চলতে পারে। ছিমছাম লুক আনবে। সন্ধেতে একটু হট স্টাইল চাইলে হল্টারনেক শর্ট ড্রেসে মোহময়ী উঠতে পারেন যে কোনও বয়সের নারীই। ঠিকঠাক ক্যারি করতে পারলে হল্টারনেকের সঙ্গে জাঙ্ক জুয়েলারি বা কাপড়ের তৈরি ব্যাঙ্গল, লকেট বেশ মানিয়ে যাবে।
পালাজো প্যান্ট বেশ চলছে বাজারে। লিনেনের পালাজো নর্মাল ট্রাউজারের থেকে ঢের বেশি আরামদায়ক। হাতের কাজের নকশায় ট্রাডিশনাল লুক চাইলে কলমকারি কাজের থেকে ভাল কিছু হয় না।
কনট্রাস্ট ফ্যাশন এখন মার্কেটে সুপারহিট। এক রঙা শাড়ির সঙ্গে কনট্রাস্ট রঙের পাইপিং দেওয়া স্লিভলেস ব্লাউজ দেখতে খুবই ভাল লাগে। যদি স্লিভলেসে স্বচ্ছন্দ না হন তাহলে চেহারার গড়ন অনুযায়ী ঢিলেঢালা থ্রি কোয়ার্টার ঝুলের ব্লাউজ বেশ স্টাইলিশ, ফ্যাশনে নতুন লুকও নিয়ে আসবে। এই সাজের সঙ্গে হাতভর্তি অক্সিডাইজড চুড়ি অন্য মাত্রা দেবে।
ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সুতির পেনসিল স্কার্ট বা ফর্মাল কটন ট্রাউজার হলে তার সঙ্গে পরা যেতে পারে বেজ, হাল্কা গোলাপি অথবা লাইট অ্যাপেল গ্রিন রঙা লিনেনের শার্ট। কর্পোরেট দুনিয়ায় এখন পেনসিল কাটের স্কার্ট বা বক্স প্লিট করা হাঁটু-ঝুল স্কার্টও বেশ ট্রেন্ডি। ফর্মাল পার্টি বা সান্ধ্য অনুষ্ঠানেও মেয়েরা এই জাতীয় পশ্চিমী ফ্যাশনের দিকেই বেশি ঝুঁকছেন। আর রঙের মধ্যে কমলা, পিচ, লেমন, অ্যাপেল গ্রিন অলটাইম পছন্দ মেয়েদের।
সুতি আর লিনেনে কিন্তু আছে সূক্ষ্ম ফারাক
এখনকার দিনে সুতি আর লিনেনের মিশ্রণ থাকায় ফারাক করাটা কিছুটা ঝকমারি। তবে জেনে রাখা ভাল সুতি আর লিনেনের মধ্যে তফাৎটা কোথায়। সুতি তৈরি হয় কার্পাস তুলো থেকে। আর লিনেনের উৎস হল তিসি। এই শস্যের ফলনে তেমন রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় না। তাই পরিবেশ রক্ষার দায়িত্বটাও থাকে। তবে লিনেনের প্রতিটি সুতো আর নানারকম প্রক্রিয়ায় তৈরি হয়। ফারাকটা হয় বুননে। সুতি আর লিনেন দুই আরামদায়ক, হাল্কা তবে লিনেনে অতটা ঠাস বুনট থাকে না। তাই দিব্যি হাওয়া চলাচল করতে পারে, অনেক বেশি কমফর্টেবল।
আরও একটা ফারাক আছে। লিনেন অনেক বেশি উজ্জ্বল। লিনেনের পোশাক একটু কুঁচকে কুঁচকেই থাকে। বেশি ইস্ত্রি করার প্রয়োজন হয় না। তবে লিনেনের পোশাক বেশিদিন উজ্জ্বল রাখতে একটু যত্নআত্তি করার প্রয়োজন হয়। লিনেন এমনিতে খুব টেকসই তবে ওয়াশিং মেশিনে ঘন ঘন লিনেনের পোশাক না কাচাই ভাল। ঠান্ডা জলে বাড়িতেই মাইল্ড ডিটারজেন্টে কেচে শুকিয়ে নিন। জল ঝরে গেলে ভাল করে ইস্ত্রি করে নিলেই দীর্ঘদিন টিকে যাবে গ্যারান্টি।