কালো হরিণ চোখের জাদু সবসময়ই নজরকাড়া
পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে…
কাজল কালো মায়াচ্ছন্ন দুই চোখ, যে চোখের পাতায় আশ্রয় খোঁজা যায়। কাজল কালো চোখের আবেদনই আলাদা। বঙ্গ ললনারা এই চোখের ইশারায় কত যে পুরুষের হৃদয়ে ঝড় তুলেছেন তা বলাই বাহুল্য। বাংলা সাহিত্যে তো কথাই আছে..’পটলচেরা চোখ’ । মুখের গড়ন যেমনই হোক, মেকআপের ধরনে যতই বৈচিত্র্য আসুক, চোখের সাজে সেই জাদু না এলে পুরোটাই মাটি। বর্ষার মেঘলা দিন হোক, অফিসের ব্যস্ততা, উৎসব-অনুষ্ঠানের চমক-ঠমক বা পুজোর সাজ, চোখই মেকআপের শেষ কথা। লাস্যময়ী সাজে আবেদনময়ী চোখ না হলে পুজোর সাজ ঠিক জমবে না।
মেকআপ আর্টিস্টরা বলছেন, মুখ তো এবার মাস্কে ঢাকা। পেলব দুই ঠোঁটের হাতছানি করোনা আতঙ্কে চাপা পড়ে যাবে। কাজেই চোখের ইশারাতেই ভুবন ভোলাতে হবে। মেঘলা চোখের কোলে সমুদ্রনীল রঙের মায়ায় ভালবাসার মানুষও বলবে ‘আঁখি পানে যবে আঁখি তুলি, দুখ-জ্বালা সব যাই ভুলি।’
ওগো কাজল নয়না হরিণী…
আইলাইনারের চেয়ে মেঘকালো ঘন কাজলের টানেই অনন্যা হয়ে ওঠেন বঙ্গ তনয়ারা। স্কিন টোনের সঙ্গে ম্যাচ করে হাল্কা আই শ্যাডো টাচ আর চোখের উপরে ঘন কাজল দেবে চার্মিং লুক। তার সঙ্গে অল্প মাসকারার প্রলেপ জমে যাবে। মাসকারা-আইলাইনার দিয়ে চোখ ডিফাইন না করলে মেকআপই অসম্পূর্ণ। তবে মেকআপের রুলবুকে গরম, বর্ষা, শীত সব ঋতুতেই এক নিয়ম। যদি চোখের মেকআপ হালকা থাকে, তা হলে ঠোঁটে পপ আপ কালার ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে এবার যেহেতু ঠোঁট বেশিটা সময় ঢাকাই থাকবে, তাই চোখকেই আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে। তবে আই শ্যাডো বাছতে হবে স্কিন টোনের সঙ্গে ম্যাচ করে। ফরসা ত্বকের রঙে আই শ্যাডো হতে পারে পিচ পিঙ্ক। রঙ চাপা হলে, কালো, ডার্ক ব্রাউন বা গ্রে শেডের আই শ্যাডো বেছে নেওয়া যেতে পারে। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ক্রিম বেস স্কিন-টোনের আই শ্যাডো ব্যবহার করা যেতে পারে।
নেশায় বুঁদ স্মোকি আইজ
ভারতীয় পোশাক হোক বা সেক্সি পশ্চিমী ট্রেন্ড, স্মোকি আইজ সবসময়েই ‘ইন’ । মেটালিক স্মোকি আইজের জন্য ক্রিম কালারের বেস ও পাউডার আই শ্যাডো ব্যবহার করলে ভাল। সঙ্গে শাইনি হাইলাইটার। চোখের সম্পূর্ণ অংশটিতে মাঝারি টোনের আইশ্যাডো লাগাতে হবে। সাবেক সাজে ভারতীয় ছোঁয়া আনতে চারকোল ব্ল্যাক বা স্ট্রং ব্ল্যাক আইশ্যাডোকে চোখের বাইরের কোণ থেকে আরম্ভ করে সম্পূর্ণ চোখের পাতায় মিলিয়ে দিতে হবে। ঘন মাসকারা চোখের পাতায় লাগানো অত্যন্ত আবশ্যক। মেকআপ আর্টিস্টরা বলেন, স্মোকি আইজের মতো আকর্ষণীয় চোখের মেকআপ আর হয় না। সাধারণত স্মোকি আইজের জন্য ধূসর, চারকোল, ব্রাউন এই সব রঙের আইশ্যাডো ব্যবহার করা হয়। কিন্তু লুকে বৈচিত্র আনার জন্য কালো এবং ধূসরের পরিবর্তে সবুজ ও বেগুনি এবং ব্রাউনের পরিবর্তে কালো অথবা চারকোল ব্যবহার করা যেতে পারে। ব্রাউন ফ্লুইড লাইনার বা জেল লাইনার ব্যবহার করে ব্রাউন স্মোকি আইজ যে কোনও পশ্চিমী পোশাকের সঙ্গেই ভাল যাবে।
কুল টু-টোন
গত কয়েক বছরের ফ্যাশন ম্যাগাজিনগুলো বলছে চোখে ডুয়াল টোন বা দুটি রঙের ব্যবহারের এখন রমরমা বাজার। চোখের টপ ও বটম আইলিডে দুটি ভিন্ন রঙের ব্যবহার করা হয় টু-টোনের ট্রেন্ডে। ত্বকের রঙ আর পোশাকের রঙের সঙ্গে ম্যাচ করে ডুয়াল টোন একটা আলাদা ইমপ্যাক্ট তৈরি করে। বাদামী চোখের তারা হলে মেটালিক কপার ও কালোর যুগলবন্দি বেশ খোলে। হ্যাজেল চোখের জন্য বুনো সবুজ ও চকোলেট ব্রাউনের জুটির তুলনা নেই। সব রঙের চোখের জন্য গোলাপি ও চকোলেট ব্রাউনের যুগলবন্দি নজরকাড়া। তাছাড়া সবুজ ও গোলাপির টু-টোনও এখন বেশ পপুলার।
চোখের পাতায় ঝিকিমিকি
চোখের সাজে ক্রিস্টাল মেকআপ আলাদা আভিজাত্য নিয়ে আসে। সোনালি, রূপোলি বা গোলাপি রঙের ছোট ছোট ক্রিস্টাল চোখের উপর ও নীচে লাগিয়ে নিলে লুকটাই বদলে যায়। দোকানে ঝিকিমিকি তারা বা হার্টসের ক্রিস্টাল সহজেই পাওয়া যায়। চোখের মেকআপের পরে আইলিডে ক্রিস্টাল সাজিয়ে নেওয়া যেতে পারে। তবে খেয়াল রাখতে হবে ক্রিস্টাল খুব হেভি আই মেকআপ। সেক্ষেত্রে জায়গা বুঝেই এই মেকআপ ব্যবহার করা উচিত। তবে পুজোর সন্ধেতে ক্রিস্টাল মেক বেশ জমে যাবে সন্দেহ নেই। চোখে ক্রিস্টাল সাজাতে হলে মুখের বাকি অংশের মেকআপ হাল্কা হবে। সব ধরনের চোখে ক্রিস্টাল মানায় না। তাই চোখের আকার, ধরন বুঝেই এই আই মেকআপ করলে ভাল। দরকার হলে মেকআপ আর্টিস্টের সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়া যেতে পারে। পোশাক যদি খুব জমকালো হয় বা পোশাকে গ্লিটার থাকে তাহলে তার সঙ্গে চোখের ক্রিস্টাল বেশ মিলেমিশে যায়।