সপ্তমীর রাতে ফ্যামিলি ডিনার জমিয়ে দিন রাজশাহী মাটন কোর্মায়
পুজো মানেই বেশিরভাগ বাঙালি মধ্যবিত্ত পরিবারে উৎসবের মেজাজ। চার-পাঁচটা দিন বাঁধনছেঁড়া খুশি। ছোটদের পড়ার চাপ নেই, বড়দের অফিস নেই, আর মাঝারিদের শাসন নেই। কিন্তু মাঝবয়সি গৃহবধূ মন্দিরার আনন্দের তার এই পুজো ক’দিন বাঁধা থাকে অন্য একটা জায়গায়। এই চারটে দিন অন্তত রান্নার ঝামেলা নেই। রান্নাঘরের লড়াই থেকে মুক্তি! কিন্তু এই পুজোয় কোথায় কী! বাইরে বেরোনোর পরিকল্পনা করতেই দ্বিধা, খাওয়াদাওয়া দূরের কথা। তার উপর কর্তার আবদার, অন্তত একটা দিন বাড়িতে ছোট করে গেট-টুগেদার হবেই। ডিনারের আয়োজন মন্দিরাকেই করতে হবে। অগত্যা! মনে মনে রাগের চোটে করোনাদলনী হয়ে উঠলেও, সমস্যা তো মিটছে না!
মন্দিরার এ সমস্যা যে তার একার নয়, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এবারের পুজোর মেনু নিয়ে ঘরে-ঘরে বেশ চিন্তা। বহু বাড়িতেই বাইরের খাবার এখনও ভরসা করে আনা যাচ্ছে না। তার ওপর পুজোর ভিড়ে নিরাপত্তা যেন আরও কমবে। ফলে বাড়িতেই মনমাতিয়ে পেটপুজো করতে হবে। মন্দিরা অনেক ভেবে ঠিক করেছেন, সপ্তমীর গেট-টুগেদারের ডিনারে সকলকে চমকে দেবেন খাঁটি মাটন কোর্মা রেঁধে। নামেও যেমন, স্বাদেও তেমন। ভারতীয় পদ্ধতিতে জমিয়ে রাঁধলে এ ডিশ জমে যায় ভাত-রুটি দুইয়ের সঙ্গেই। আগে থেকে প্রস্তুত করে রাখলে, এ রান্নার হ্যাপাও তেমন নয়। অথচ মানুষের মন জয় করতে এর জুড়ি নেই।
মন্দিরার রান্নাঘরে উঁকি দিয়ে আপনারাও শিখে নিতে পারেন এই আইটেমটি রাঁধতে। তার পরে জমিয়ে দিতে পারেন পুজোর ভোজ। চলুন, রেসিপিটা জেনে নেওয়া যাক। তার আগে জেনে নিতে হবে, ঠিক কী কী উপাদান লাগবে মাটন কোর্মা রাঁধতে।
হাড়-সহ খাসির মাংস ১ কেজি (পিসগুলো একটু বড় করে কাটা), জলঝরানো টক দই ১ কাপ, ফুল ক্রিম দুধ ১ কাপ, ঘি আর সাদা তেল মিশিয়ে ১ কাপ মতো, পেঁয়াজ কুঁচি ২ কাপ, আদাবাটা, রসুনবাটা, লঙ্কাবাটা তিনটেই ১ চামচ কর, কাঁচালঙ্কা কয়েকটি, গরম মশলার গুঁড়ো দেড় চামচ, ১ চামচ গোটা জিরে ও ১ চামচ গোটা ধনে শুকনো কড়াইয়ে নেড়ে গুঁড়ো করে নেওয়া, জায়ফল ১টা, তেজ পাতা ৪টে, বড় এলাচ ২-৩টি, ছোটো এলাচ ৫-৬টি, লবঙ্গ ৫-৬টি, গোলমরিচ হাফ চামচ, দারচিনি ৫-৬ ইঞ্চি, জয়িত্রী ২-৩ গ্রাম, নুন, চিনি স্বাদমতো।
কেমন করে রাঁধবেন?
প্রথমে একটা বড় পাত্রে মাংসটা নিয়ে তাতে দিয়ে দিতে হবে এক কাপ জলঝরানো টক দই, ছেঁড়া তেজপাতা, বড় এলাচ, ছোট এলাচ, লবঙ্গ, গোলমরিচ, টুকরো করা দারচিনি, রসুনবাটা, আদাবাটা, লঙ্কাবাটা, জিরে-ধনে ভাজার গুঁড়ো, গরম মশলা গুঁড়ো, নুন, তিন চামচ রান্নার তেল। এবার ভাল করে হাত দিয়ে মশলাটা মাখিয়ে রাখুন। মাংসের সঙ্গে সমস্ত মশলাটা যেন খুব ভাল ভাবে মেশে। হাতে করে ভাল করে এই ম্যারিনেশনের ওপরেই স্বাদ নির্ভর করে অনেকটাই।
এই কাজটা অনেক আগেই সেরে ফ্রিজে রেখে দিন মাংস।
এবার কড়াইয়ে ঘি দিয়ে তাতে দুকাপ পেঁয়াজকুচি দিয়ে ভাল করে নাড়ুন। পেঁয়াজ পুড়ে গেলেই রান্নার স্বাদ ও রং দুই-ই নষ্ট হয়ে যাবে। পেঁয়াজ খুব কড়া করে ভাজবেন না। কম আঁচে হাল্কা বাদামি হলেই তাতে দিয়ে দিন ম্যারিনেট করে রাখা মাংসটা। এবার খুব ভাল করে, উল্টে পাল্টে কষতে হবে মাংস। পেঁয়াজ আর মাংস ভাল করে নাড়াচাড়া করে গ্যাস বাড়িয়ে দিন। এবার কষতে কষতেই মাঝেমাঝে ঢাকা দিতে হবে। পাঁচ মিনিট ঢাকা দিয়ে রেখে, ফের খুলে মিনিট খানেক নাড়া—এই পদ্ধতি বেশ কয়েক বার করতে হবে ধৈর্য্য ধরে। ধীরে ধীরে বেশ অনেকটাই জল ছাড়বে মাংস থেকে। কষা যত হবে তত তেলও ছাড়তে শুরু করবে। এই কষানোর সময়টা আঁচ একটু বেশিই থাকবে। তবে বারকবার সময়ান্তরে ঢাকা খুলে নাড়তে হবে যাতে পুড়ে না যায়। কষাতে কষাতে মাংসর রংটা বদলে এলে জায়ফল বেটে দিয়ে দিন, দিয়ে দিন জয়িত্রীও। নুন দিয়ে দিন স্বাদ চেখে, কারণ ম্যারিনেশনে দেওয়া ছিল। দিন হাফ চামচ চিনি। এবার রান্নায় দিয়ে দিন এক কাপ ফুলক্রিম দুধ। আবারও ঢাকা দিয়ে এবং নেড়ে—এই পদ্ধতিতে রান্না চালাতে হবে কিছুক্ষণ। পুড়ে যাওয়া চলবে না মাংস, আবার সেদ্ধও হতে হবে। রান্নার শেষের দিকে দিয়ে দিন হাফ চামচ গরম মশলা গুঁড়ো, কয়েকটা কাঁচালঙ্কা চেরা। এবার আঁচ একদম কম করে পাত্রে ভাল করে ঢাকা দিয়ে দমে বসান ১০-১৫ মিনিট। এবার দেখে নিন মাংস নরম হয়েছে কিনা, না হলে রাখতে হবে আরও কিছুক্ষণ। আর যদি হয়ে যায়, তবে নুন-মিষ্টি চেখে নামিয়ে নিন। এ রান্নায় হলুদগুঁড়ো পড়বে না। তবে আপনি লালচে রং চাইলে লঙ্কারগুঁড়ো ব্যবহার করতে পারেন।
ব্যস, আর কী। এবার সবাইকে চমকে দেওয়ার পালা। টেবিলে পাত্র নামিয়ে ঢাকা খুলতেই যে বাদশাহী সুবাস ছড়াবে, তাতেই যেন পেট ভরে যাবে অর্ধেক।
মন্দিরার সপ্তমীর ডিনার সর্টেড। এর সঙ্গে বাসন্তী পোলাও আর নরম সাদা পরোটা—এই দুইয়েরই ব্যবস্থা করবে সে। বাচ্চাদের মুখেও যেমন ভাল লাগবে এই হাল্কা মিষ্টি স্বাদের কোর্মা, তেমনই এর রাজকীয় গাম্ভীর্য মুগ্ধ করবে বড়দেরও।