তিল কচুরি খেতে ভালবাসেন স্বয়ং মা দুগ্গা! প্রসাদ পেলে মুগ্ধ হবেন আপনিও, বানিয়ে ফেলুন এই পুজোয়
পাঞ্চালী দত্ত
আমরা কী খেতে ভালবাসি, পুজোয় কোন কোন রেস্তরাঁয় কী কী বিশেষ খাবার পুজোর ক’টা দিন পাওয়া যায়, সেগুলো আমাদের নখদর্পণে। কিন্তু যদি বলি যে মা কী খেতে ভালবাসেন, অনেকেই বলতে পারবেন না। নিজেদের পেটপুজো নিয়েই আমরা এতটাই ব্যস্ত যে মায়ের কথা আর ভাবি কই! তবে মা অবশ্য এসব নিয়ে গা করেন না। সন্তানদের বাঁধভাঙা হাসি দেখেই তাঁর পরম তৃপ্তি।
তবে মা দুগ্গার প্রিয় খাবারের কথা যদি বলতেই হয়, তাহলে জানা যায়, নারায়ণ দেবর্ষি নারদকে কিন্তু মা তাঁর প্রিয় খাবারগুলোর কথা বলেছিলেন। তার মধ্যে ছিল পায়েস, দুধ, কদলিফল, ঘৃত, শর্করা, সিত শর্করা। এছাড়া দেবীর নৈবেদ্য কীর্তনে যেসব খাবারের উল্লেখ রয়েছে সেগুলো হল ঘৃত, তিল, দধি, দুগ্ধ, কিলাটক (দুধের মালাই), দধি কুর্চি, মোদক, ফেনিকা, পট পত্র, ঘৃতমণ্ড, গোধূমপিষ্টক, বটক, খর্জুররস, গুড় মিশ্রিত চনকপিষ্ট, মধু, শূরণ, ক্রমুক, দ্রাক্ষা, খর্জুর, চারক, অপুপ, নবনীত, মুদগ, মাতুলিঙ্গ (একপ্রকার লেবু)। পুঁথি-পুরাণ নাড়াচাড়া করে দেখা যায়, মায়ের পছন্দ খুবই সাদামাঠা খাবার। কিন্তু নবরাত্রির এই ন’দিন ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে মাকে বিভিন্ন রূপে আরাধনা করা হয় এবং আলাদা আলাদা ভোগ নিবেদন করা হয়।
বলা হয়, নবরাত্রির প্রথম দিন শৈলপুত্রী রূপে মাকে আরাধনা করা হয়। দেবীকে সেদিন ঘি উৎসর্গ করলে রোগভোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। নবরাত্রির দ্বিতীয় দিন দেবীকে ব্রহ্মচারিণী রূপে পুজা করা হয়। এখানে তিনি শিবকে স্বামী রূপে পাওয়ার আকুলতায় ধ্যানমগ্না। তাই দেবীকে তপস্যাচারিণীও বলা হয়। সেদিন দেবীকে উৎসর্গ করা হয় নানারকম ফল। দুর্গার আর একটি রুদ্রমূর্তি রূপকে বলা হয় চন্দ্রঘণ্টা। দেব ও অসুরের যুদ্ধের সময় দেবীর ঘণ্টা থেকে নির্গত শব্দ তরঙ্গে অনেক অসুর নিহত হয় এবং সেই থেকে দেবীর আরেক নাম চন্দ্রঘণ্টা। নবরাত্রির এই তৃতীয় দিনে দেবীকে নিবেদন করা হয় দুধ ও ক্ষীর। চতুর্থীতে দেবীর আর এক রূপ কুষ্মাণ্ডা। এদিন মাকে নানারকম মিষ্টি ও মালপোয়া ভোগ দেওয়া হয়। চারহাতরূপী স্কন্ধমাতা দেবীকে পঞ্চমীতে পুজো করা হয়। স্কন্ধ অর্থাৎ কার্তিকের মাতা হিসেবে পুজো করা হয় বলে দেবী সেদিন স্কন্ধমাতা নামে পরিচিতা। ষষ্ঠীতে দেবীকে ক্যাত্যায়নী রূপে পুজো করা হয়। মধু হল সেদিনের বিশেষ ভোগ। দেবীর আরেকটি রুদ্র রূপ হল কালরাত্রি। সপ্তমীতে মাকে গুড় অথবা গুড়জাতীয় মিষ্টি ভোগ দেওয়া হয়। মহাষ্টমীতে মহাগৌরীকে অর্পণ করা হয় নারকেল। ভক্তদের বিশ্বাস, অষ্টমীতে ব্রাহ্মণদের নারকেল দান করলে নিঃসন্তানেরা সন্তান লাভ করেন।
নবমীতে দেবী দুর্গা সিদ্ধিদাত্রী রূপে পৃথিবীতে আসেন। এদিন দেবীকে অর্পণ করা হয় তিল। সমস্ত বিপদ থেকে রক্ষা পেতে তিল দান একটি বিশেষ প্রথা বা বিশ্বাস।
আজ এই তিল দিয়েই একটি রেসিপি জানাচ্ছি, তিলের কচুরি। তিলের এই বিশেষ পদটি ভোগ হিসেবে বানালে তা যেমন গ্রহণযোগ্য দেবীর কাছে, তেমনি ভক্তরাও প্রসাদ খেয়ে মুগ্ধ হবেন।
তিলের কচুরি বানাতে কালো ও সাদা তিল আধভাঙা করে মিক্সিতে বেটে নিয়ে একটি পাচ্রে রাখুন। এবার মিক্সিতে একসঙ্গে আধভাঙা করে ফের বেটে নিন ধনে, গোলমরিচ, মৌরি, জিরা, লাল লঙ্কা, লবঙ্গ। এবারে কড়াইতে তেল দিয়ে, মিক্সিতে পেষা মশলাটি তেলে দিয়ে দিন। তিল বাটাও মেশান। এক চিমটি হিং দিন, সেইসঙ্গে অল্প বেসন দিয়ে নাড়াচাড়া করুন। এবারে তাতে দিন আদা কুচি, শুকনো খোলায় ভাজা চিনা বাদাম কুচি, নুন, সামান্য জিরে-ধনে-লঙ্কা গুঁড়ো। পুরো তিল ও মশলাটা ঝুরঝুরে হয়ে গেলে নামিয়ে ঠান্ডা করুন। এবার ময়দা মেখে লুচির মতো মণ্ড বানিয়ে লেচি করুন। লেচির ভেতরে ওই তিলের পুর দিয়ে মুখ বন্ধ করে হালকা ভাবে বেলে নিন সেটি। এবারে ডুবো তেলে লাল করে ভেজে তুললেই তৈরি তিলের কচুরি।
আলুর তরকারি হোক বা একটু আচার, এ খাবার দেবী-ভক্ত দুজনেরই দারুণ পছন্দ হবে। এই পুজোয় একদিন মাকে খুশি করতে ও নিজের পেটকে খুশি করতে এই রেসিপি ট্রাই করতেই পারেন।