চিরচেনা টোম্যাটো-খেজুর নয়, অষ্টমীর দুপুরে খিচুড়ির সঙ্গে আমসত্ত্ব-তেঁতুল-লঙ্কার চটপটি চাটনি
ছোটবেলা থেকে রান্নাঘরের ধারপাশ মাড়ায়নি কখনও জিনিয়া। বাবা-মা তুলোর বাক্সে মানুষ করেছে বলতে যা বোঝায়, জিনিয়া ঠিক তাই। বড় হয়ে মাঝেমাঝে টের পায়, একেবারেই রান্না না জানার ফল। এতদিন মা রাঁধতে দিত না, এখন মা-ই বলে, দুদিন পরে বাইরে যেতে হসে বুঝবি মজা। জিনিয়ার এক মুশকিল আসান আছে, মালিনীদি। জীবনে কোনও রকম কোনও বিপদে পড়লেই মালিনীদির শরণাপন্ন সে।
এহেন জিনিয়ার খুব শখ, পুজোর সময় অষ্টমীর দুপুরে যে খিচুড়ি হবে, আত্মীয়-স্বজনরা আসবেন, সে দিন কিছু একটা পদ রাঁধে সে। কঠিন কিছু হলে পারবে না, আবার সুস্বাদু না হলে কপালে দুঃখ আছে। অনেক কষ্টে মায়ের কাছ থেকে পারমিশন পেয়েছে। তবে মায়ের কড়া হুকুম, ওই ইউটিউব দেখে এমন কিছু হাবিজাবি মোটেই রাঁধা চলবে না, যার জোগাড়যন্ত্র করতে জীবন বেরিয়ে যাবে।
জিনিয়ার অবধারিত ফোনকল গেল মালিনীদের কাছে। এক ফোনেই দারুণ আইডিয়া। “খিডুড়ির সঙ্গে তো চাটনি মাস্ট। বাড়িতে বল, ওই দিন টোম্যাটোর চাটনি না করে, তোকে চাটনির দায়িত্ব দিতে। এমন চাটনি শেখাব, আত্মীয়রা প্রশংসা করতে করতে থালা চেটে খাবে।”
মালিনীদি তাঁর মায়ের থেকে শেখা এক দারুণ অরিজিনাল চাটনির রেসিপি বাতলে দিল জিনিয়াকে। সামান্য আয়োজন, সহজে রান্না। অথচ স্বাদে তুলনাহীন!
চাটনি বানাতে লাগবে আমসত্ত্ব, তেঁতুল, কাঁচালঙ্কা, নুন, চিনি। ব্যস, আর কিচ্ছু না।
মালিনীদি শিখিয়ে দিল, এই চাটনির আসল মজা লুকিয়ে আছে আমসত্ত্ব কাটায়। ওটি ঠিক করে করতে পারলে আর চিন্তা নেই। প্রথমে আমসত্ত্বটা যতটা থাকবে, তা ভাগ করে নিতে হবে ২:১ অনুপাতে। মানে যদি ছটা আমসত্ত্বর বার থাকে, তবে তাকে চারটে আর দুটোয় ভাগ করে নিতে হবে। এবার দুই ভাগ আমসত্ত্ব অর্থাৎ চারটে বার কাটতে হবে একটু বড় বড় পিস করে। এক একটা টুকরো এক ইঞ্চির কিউব হবে। আর বাকি এক ভাগ অর্খাৎ দুটো বার কাটতে হবে ছোট ছোট কিউব করে।
আমসত্ত্ব কাটা হলে এবার তেঁতুল ভিজিয়ে দিতে হবে ঈষদুষ্ণ জলে। কুচি করে রাখতে হবে কাঁচালঙ্কা।
এবার কড়া চাপিয়ে তাতে সামান্য সর্ষের তেল দিয়ে কড়াইটার গায়ে মাখিয়ে নিতে হবে একটু। তেল বেশি দিতে হবে না। এর পরে ছোট আমসত্ত্বগুলো দিয়ে দিতে হবে কড়াইয়ে। একটু পরেই গলতে শুরু করবে ওগুলো। গলতে থাকলে তাতে দুচামচ চিনি আর সামান্য নুন দিয়ে নাড়তে হবে। ধীরে ধীরে আমসত্ত্বগুলো পুরোপুরি গলে ক্কাথ হয়ে যাবে। প্রয়োজনে সামান্য জল দিয়ে ঢাকা দেওয়া যেতে পারে। এবার ওই গলা আমসত্ত্বর ক্কাথে আগে থেকে ভিজিয়ে রাখা সেই তেঁতুলটা ভাল করে চটকে, ছেঁকে দিতে হবে। টক পছন্দ করলে একটু বেশি দেওয়া যায়।
এর পরে সব শেষে কেটে রাখা বড় আমসত্ত্বর টুকরো আর কাঁচালঙ্কা কুচি দিয়ে দিতে হবে। ব্যাস, কয়েক মিনিট নেড়েচেড়ে সবটা ফোটালেই মন-মাতানো আমসত্ত্ব-তেঁতুল-লঙ্কার চাটনি রেডি!