দশমীর দিন ঘট বিসর্জন নয়, উল্টে ঘট প্রতিষ্ঠা হয় গুসকরার চোংদার বাড়ির পুজোয়
দশমীতে বিসর্জন হয় না ঘট। এখানে ঘট আহ্বান করা হয়। এমনটাই রীতি গুসকরার চোংদার বাড়ির। প্রায় পাঁচশো বছর বয়স হল চোংদার পরিবারের দুর্গাপুজোর। পুজো শুরু হয় শের শাহের আমলে।
জৌলুস কমলেও ঐতিহ্য আর পরম্পরাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন এই পরিবারের বর্তমান সদস্যরা। গুসকরার জমিদার চতুর্ভুজ চোংদারের হাত ধরেই এই পুজো শুরু হয়েছিল বলে জানা যায়। জমিদার বাড়ির কেন্দ্রস্থলেই তৈরি হয় বিরাট দোতলা ঠাকুর দালান। এক সময়, কলকাতার নামী কোম্পানির যাত্রাপালার আসর বসতো এখানে। যদিও এখন সে সবই স্মৃতি।
বারান্দার পলেস্তারা খসে পড়লেও ধুমধাম আর জাঁকজমকের কমতি হয়নি এখনও। এখনও পুজোর চারটে দিন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেই মেতে ওঠেন গোটা গ্রামের মানুষ। পুজোর চারদিনই যজ্ঞ হয়। চোংদার বাড়ির পুজোর এটাও একটা বিশেষ দিক। এছাড়াও নবমীর দিন হয় কুমারী পুজো। এলাকার বাইরে থেকেও অনেকে যান চোংদার বাড়ির পুজো দেখতে। বর্তমানে পুজোর সময় পরিবারের বাইরে থাকা সকল সদস্যই এসে হাজির হন গুসকরায়।
সাধারণ রীতি অনুযায়ী দশমীতে ঘট বিসর্জন করা হয়। কিন্তু চোংদার বাড়িতে এই দিন ঘট প্রতিষ্ঠা করা হয়। রেখে দেওয়া হয় এক বছর। পরের বছর ষষ্ঠীর দিন সেই ঘট বিসর্জন হয়। চোংদার পরিবারের গৃহবধু মল্লিকা চোংদার বলেন, ‘‘পরিবারের মঙ্গল কামনায় আমাদের পরিবারের ঘট বিসর্জন করা হয় না। এটাই আমাদের জমিদার বাড়ি বিশেষত্ব।’’
আগে চোংদার বাড়ির পুজো শুরুর আগে কামান দাগা হত। তারপরেই হত বলিদান। এখন কামান নেই। তবে এখনও প্রথা মেনে বন্দুকে গুলি ছুড়ে সন্ধি পুজো শুরু হয়। শাস্ত্রমতে পুজো হয় এই বাড়িতে। বলি প্রথা এখনও চালু রয়েছে। পুজোর সময় ৫১ থালার ভোগ রান্না হয়। বাড়ির মহিলারাই ভোগ রান্না করেন। সবার মঙ্গল কামনায় পুজোর চারদিন ধরে প্রদীপ জ্বেলে রাখার রেওয়াজ আছে এই পুজোয়।
চোংদার বাড়ির দুর্গাপুজোর প্রতিষ্ঠাতা চর্তুভুজ চোংদার দশমীর দিন মারা যান। ওই দিন তাঁর স্ত্রীও মারা যান প্রায় একই সঙ্গে। সেই জন্য দশমীর দিন চোংদার বাড়িতে শ্রাদ্ধ দেওয়া হয়। এই রীতি আজও বর্তমান। পুজোর চারটে দিন চলে পাত পেড়ে খাওয়াদাওয়া। পরিবারের স্বজনবান্ধবদের সঙ্গে তাতে অংশ নেন এলাকার মানুষজনও। দশমীর দিন সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন এই বাড়ির মহিলারা।