আউশগ্রামের জঙ্গলঘেরা গ্রাম কালিকাপুরে জমিদারবাড়ির ঠাকুরদালানে সাবেকি দুর্গোৎসব
প্রায় সাড়ে তিনশো বছর পর এবার প্রথম রঙের প্রলেপ পড়ল আউশগ্রামের জঙ্গলঘেরা গ্রাম কালিকাপুরের জমিদারবাড়ির ঠাকুর দালানে। বৃহস্পতিবার বোধনের দিন থেকেই সাবেকি রীতি মেনে জমিদারবাড়ির পুজো শুরু হয়েছে। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চলছে রঙের কাজ।
একসময় জঙ্গলের মধ্যে এই গ্রামের হদিস পেতে যে কোনও মানুষকে বেশ কিছুটা ভাবতে হত। কিন্তু এখন এই কালিকাপুর পর্যটকদের অন্যতম গন্তব্য। সৌজন্যে এখানকার জমিদার রায় পরিবারের সাতমহলা বাড়ি, বিরাট এলাকা জুড়ে দিঘি, তিনদিক ঘেরা খোলা আটচালা বিশিষ্ট দুর্গা দালান, দেউরি, ঝুলবারান্দা আর অপূর্ব জোড়া শিবমন্দির যার দেওয়ালে টেরাকোটার কাজ। এই পটভূমিকে কাজে লাগিয়েই অনেক চিত্র পরিচালক তাঁদের সিনেমার শ্যুটিংস্পট হিসাবে কালিকাপুরের রাজবাড়িকে বেছে নিয়েছেন।
প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগে এই বাড়ি তৈরি হয়েছিল। জানা যায় এই পরিবারের কোনও পূর্বপুরুষ বর্ধমান রাজবাড়িতে দেওয়ানের কাজ করতেন। তাঁদেরই বংশধর জমিদার পরমানন্দ রায়ের আমলে এই বিশাল দুর্গাদালান তৈরি হয় যা গঠন বৈচিত্রে অনন্য। বিশাল এলাকাজুড়ে আয়তাকার মন্দির। সামনে তিনদিকে সারিবদ্ধ দোতলা বাড়ি এবং কারুকাজ করা থামের উপর আটচালা। যা দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে ভগ্নপ্রায় অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছিল। ঐতিহ্যপূর্ণ এই বাড়িটিকে টিকিয়ে রাখতেই রঙ করা হল বলে জানিয়েছেন পরিবারের বর্তমান সদস্যরা।
তাঁরা জানান, সারাবছর প্রায় ফাঁকা অবস্থাতেই পড়ে থাকে এটি। মাঝেমধ্যে ইতিউতি কৌতুহলী মানুষ আসেন এই জমিদার বাড়ি দেখার জন্য। আর বসে শ্যুটিংয়ের সেট। সে সময় অবশ্য পুরো এলাকা জমজমাট হয়ে যায়। কিন্তু ফি বছর দুর্গাপুজোর সময় এবাড়ির প্রত্যেক সদস্য এখানে আসেন। তখন আবার পুরো বাড়ি জুড়ে হৈ হুল্লোর আর তারুণ্যের উৎসব বসে যায়। বোধনের দিন থেকে প্রতিদিনই এখানে চণ্ডীপাঠ হয়। হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের।
কিন্তু প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগেকার তৈরি এই কাঠামো কতদিন ঠিক থাকবে সে নিয়ে চিন্তায় ছিলেন বাড়ির প্রবীণ সদস্যরা। পরিবারের বর্তমান সদস্য অসিত রায় জানান, দুর্গাদালানটি সংস্কার করার পরিকল্পনা হচ্ছিল অনেক দিন ধরেই। কিন্তু অর্থের অভাবে তা হয়ে উঠছিল না। তিনি বলেন, “বছর পাঁচেকের পরিকল্পনার পর গত বছর পুজোর সময় সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। সেই মতো পরিবারের সদস্যরা নিজেদের সামর্থ্য মতো অর্থ দেন। শুরু হয় দালানটির সংস্কার এবং রঙ করার কাজ। আগে চুন সুরকির কাজের উপর পালিশ ছিল। তৈরির পর থেকে এই প্রথম রঙের প্রলেপ পড়ল। প্রাচীন এই স্থাপত্যটি টিকিয়ে রাখার জন্যেই এই উদ্যোগ।’’
শাল পলাশের জঙ্গল ঘেরা আউশগ্রামের কালিকাপুর গ্রামের এই জমিদার বাড়ির পুজো ঘিরে এখন এলাকার বাসিন্দারা মেতে ওঠেন। এখানে পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য, কৃষ্ণনবমীর দিন মায়ের বোধন হয়৷ তারপর চিরাচরিত নিয়ম মেনে ১৫ দিন ধরে চলে পুজো৷ নবমীর দিন, জমিদার বাড়িতে ভোগ খান গোটা গ্রামের মানুষ। এবার অবশ্য করোনা পরিস্থিতিতে বিধিনিষেধের খাঁড়া এখানেও।