হেঁসেল-সজ্জাও ফেলনা নয়, পরিপাটি রান্নাঘরে পুজোয় জমুক ভূরিভোজ
সোহিনী চক্রবর্তী
বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ হল দুর্গা পুজো। আর উৎসব যখন বাঙালির, তখন জমিয়ে পেটপুজো মাস্ট। সাবেক রান্না থেকে ফিউশন পদ, মেনুতে জায়গা পায় সবকিছুই। সকালের জলখাবার, দুপুরের লাঞ্চ, সন্ধের স্ন্যাক্স, রাতের ডিনার—–গৃহকর্ত্রীর দায়িত্ব থাকে বাড়ির সকলকে পরিপাটি করে রকমারি খাবার পরিবেশন করা। হাড়ভাঙা খাটনির পরেও বাড়ির গৃহিণীর মুখে লেগে থাকে পরিতৃপ্তির হাসি।
এই পুজোয় তাঁদের মনে এবার একটু অন্যরকমের আনন্দ দিন। পুজোর ক’দিন গৃহকর্ত্রীরা অনেকক্ষণ যেখানে সময় কাটান অর্থাৎ বাড়ির লক্ষ্মীর সাধের হেঁশেল সাজিয়ে তুলুন সাধ এবং সাধ্য মতো।
রান্নাঘরে জায়গা বেশি হলেই ভাল
বাড়ির রান্নাঘর যদি একটু খোলামেলা হয়, চওড়া হয় অর্থাৎ জায়গা বেশি থাকে তাহলে যিনি রান্না করেন তাঁর একটু সুবিধে হয় বইকি। তাই অপ্রয়োজনীয় জিনিস পুজোর ক’দিন রান্নাঘরের চৌহদ্দি থেকে বিদায় করুন সবার আগে।
একফাঁকে জিরিয়ে নেওয়া ব্যবস্থা
কোনও একটা কোণায় অবশ্যই রাখুন একটা চেয়ার বা টুল। রান্না করতে করতে একবার তো মানুষটার বসতেও ইচ্ছে হতে পারে। তাই মাংস কষানো বা তরকারি সাতলানোর মাঝে একটু জিরিয়ে নেওয়ার উপায় থাকবে।
পাল্টে ফেলুন বাসনপত্র
সব বাঙালি বাড়িতেই কিছু কাচের বাসনপত্র একদম আলাদা করে তোলা থাকে। বিশেষ দিনে ব্যবহারের জন্য। এই পুজোয় সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন। তবে সাবধান, কাচের বাসন ভাঙলে কিন্তু মহা বিপদ। পুজো পার্বণের দিনে রক্তারক্তি কাণ্ড হতে পারে। যাঁরা এই সমস্যা একেবারেই এড়িয়ে যেতে চান তাঁরা হাল্কা ফাইবারের বাসন ব্যবহার করতে পারেন। কিংবা স্টিল বা চীনেমাটির বাসনকোসন তো রয়েছেই।
মশলা সঞ্চয়ে কিপ্টেমি নয়
পুজোর দিন হেঁশেল খালি দেখতে মোটেই ভাল লাগে না। বিশেষ করে যিনি সাধ করে পঞ্চব্যঞ্জন রান্না করবেন তাঁর মেজাজ তিরিক্ষি হওয়ার জন্য যেকোনও মশলার খালি কৌটো নজরে আসাই যথেষ্ট। অতএব মাসকাবারে এই মাসটায় অন্তত খেয়াল করে গুছিয়ে সব কিনে রাখুন। যাতে হাত বাড়ালেই নাগালে থাকে সব ধরনের মশলা।
ফ্রিজ থাকলে উপকার অনেক
রান্নাঘরে খাবার জল রাখার ব্যবস্থা না থাকলে সেদিকে অবশ্যই নজর দিন। আগুনের আঁচে-তাপে রান্না করতে করতে গলা শুকাতেই পারে। পিপাসার সময় সামনে জল পেলে ভালই লাগবে। রান্নাঘর লাগোয়া ফ্রিজ থাকলে নুন-চিনি-লেবুর সরবত করে রাখা যেতে পারে গৃহকর্ত্রী বা যিনি রান্না করছেন তাঁর জন্য। এ কাজ বাড়ির আর যে কেউ এক ফাঁকে করে নিতেই পারেন।
ফ্রিজের উপর ছোট্ট একটা ঘড়িও রাখতে পারেন। অনেক রান্নাতেই সময় মেপে নজর রাখতে হয়। মাইক্রোওভেনে ব্যাপারটা আপনাআপনি হলেও অনেকক্ষেত্রেই ঘড়ির প্রয়োজন পরে। মা-কাকিমাদের অবশ্য এসবের নিখুঁত আন্দাজ থাকে। তবুও তাঁদের সুবিধার্থে এটুকু করা যেতেই পারে।
নাগালে রাখুন প্রয়োজনের ছোট জিনিস
থালা-বাটির সঙ্গে অবশ্যই গুছিয়ে রাখতে হবে হাতা-খুন্তি-চামচ। প্রয়োজনীয় কাটাকুটির জন্য ছুরি কিংবা কাঁচিও হাতের নাগালে রাখা ভালো। রান্নার ফাঁকে হাতে হাতে দু’চারটে বাসন ধুয়ে ফেলার জন্য লিকুইড সোপ আর স্কচব্রাইট রাখা মাস্ট। এসবই দৈনন্দিনের রান্নাঘরেই কাজে লাগে। পুজোর ক’দিন সবটাই একটু পরিপাটি করে রাখা আরকি। যাতে খুঁজতে গিয়ে গন্ডগোল না শুরু হয়ে যায়। হাত ধোয়ার জন্য একটা লিকুইড সোপও রাখতে পারেন। করোনা আবহে হাইজিন বজায় রাখতে এটা প্রয়োজন। তবে যে জায়গায় খাবার রাখবেন সাবান যেন তার থেকে শত হস্ত দূরে থাকে, সেদিকে নজর রাখতে হবে।
রান্নাঘরে কোনও র্যাক বা তাক থাকলে পুজোর আগে সেগুলো ঝেড়ে-মুছে ধুলো সাফ করে নিন। কোনও বিশেষ পদ রান্নার জন্য বিশেষ মশলার প্রয়োজন হলে সেটা রান্নাঘরের এমন জায়গায় রাখুন যাতে সবসময়েই নজরে পড়ে।
ওয়াইপারে ঘুচবে তেলকালি
পঞ্চব্যাঞ্জন রান্না হলে ধোয়া-মোছার কাজও বেড়ে যায়। আজকাল ওয়াশেবল ওয়াইপার কিনতে পাওয়া যায়। কাপড়ের বদলে এই ওয়াইপার ব্যবহার করুন। সেই সঙ্গে অবশ্যই রান্নাঘরে রেখে দিন টিস্যু পেপারের বেশ কয়েকটা প্যাকেট এবং সঠিক মাইক্রন যুক্ত পলিথিন। প্রয়োজনে দুটো বাস্কেট রাখার ব্যবস্থা করুন। হাতের সামনেই রাখুন দেশলাই বাক্স।
দারুন লেখা ……. আমি এই টিপস গুলো কাজে লাগাবো।