পুজোর আগে ঘরের সাজ, ভাল হতে পারে আপনার মানসিক স্বাস্থ্যও: উর্বশী বসু
লকডাউনের কারণে প্রায় ২৪ ঘণ্টা থাকতে হচ্ছে ঘরে। ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ আর ‘ওয়ার্ক ফর হোম’– এই দুইয়ে নাজেহাল অবস্থা প্রায় সকলের। বহুদিন বেড়াতে যেতে পারছেন না ভ্রমণপিপাসুরা, অফিসপাগল মানুষজনও ঘরেই আটকে। কাজের মাঝে একটু ব্রেক বলতে সিনেমা দেখা, বই পড়া, বা শখের রান্না করা। ফলে দীর্ঘদিনের একঘেয়েমিতে খুব স্বাভাবিক ভাবেই মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটছে অনেকের। যে ঘর সবচেয়ে ভালবাসার, সবচেয়ে শান্তির, সেখানেও একটানা থাকতে থাকতে হাঁপিয়ে উঠেছেন অনেকেই। এই সময়ে ঘরেরই একটু রদবদল মন-মেজাজ ভাল রাখতে বেশ সাহায্য করতে পারে কিন্তু।
পুজোর আর বাকি মাত্র ১৫ দিন। হাতে একদম বেশি সময় নেই। এরমধ্যেই চটজলদি বদলে ফেলুন অন্দরের সাজ। নতুনত্বের ছোঁয়ায় একঘেয়েমি কেটে যাবে একেবারে। সে নিয়েই দ্য ওয়ালের প্রতিনিধি পল্লবী ঘোষের সঙ্গে আলোচনায় বিশিষ্ট ইন্টেরিয়র ডিজাইনার ঊর্বশী বসু।
আসবাবপত্রের জায়গা বদল
পুরোনো আসবাবগুলোকেই নতুন ভাবে রিআ্যরেঞ্জ করুন। এতে ঘরের গেটআপ চেঞ্জ হয়। স্পেসও বাড়ে। ফলে হাঁটাচলা করতে সুবিধা হয়। মাটিতে বসে গল্প বা কাজ করার সুযোগও পাওয়া যায়। এই সময় আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধবরা বাড়িতে আসেন। ফলে একটু বেশি স্পেসের প্রয়োজন হয়ই। আপনার চেনা ঘরও নতুন লাগবে এই সামান্য বদলে। কিছুই না, খাট-আলমারি-টেবিল একটু এদিক ওদিক করলেই কাজ হয়ে যাবে। একদিন লেগে পড়ুন কোমর বেঁধে।
ফুলের সাজ
বিশেষ দিনগুলোয় বাড়ির অন্দরে ফুলের সাজ যে অন্য মাত্রা যোগ করে, তা আমরা ছোট থেকেই দেখে আসছি। তাই পুজোর ক’টা দিন যদি প্রিয় ফুলদানিতে নিজের পছন্দের ফুল রাখা যায়, তাতে ঘর একটু আলাদা লাগে। ফুলের সতেজতা মনকে স্পর্শ করে যায়। সুবাস ছড়ালে তো কথাই নেই।
সুগন্ধি মোমের যাদু
আজকাল বাজারে একটু খোঁজ নিলেই পেয়ে যাবেন ফ্র্যাগনেন্স ক্যান্ডেল। নানা রকম গন্ধযুক্ত মোমবাতি পাওয়া যায় এখন। দেখতেও সুন্দর। সন্ধের পর ঘরে রাখতে পারেন এই সুগন্ধি মোম। ল্যাভেন্ডার, জুঁইফুলের গন্ধে রিল্যাক্সড লাগবে। মোমের নরম আলো মনকে শান্তও করবে।
সবুজের ছোঁয়া
ইদানিং ইনডোর প্ল্যান্ট নিয়ে খুব মাতামাতি চলছে। এই গাছপালা ঘরের শোভা যে শুধু বাড়াচ্ছে তা নয়, শরীর ও মনের কারণেও অনেকের পছন্দ ইনডোর প্ল্যান্ট। বসার ঘরের কোণায়, সিঁড়িতে, শোওয়ার ঘরে এমন গাছ রাখলে ঘরের গেটআপ একেবারে বদলে যাবে। উজ্জ্বল, ঝকঝকে এক তারুণ্য খেলে যাবে ঘর জুড়ে। সবুজের ছোঁয়া মনকে সবসময় ভাল করে। পুজোর আগে তাই সবুজ সাজে সাজিয়েই ফেলুন প্রিয় ঘরের আনাচকানাচ।
রান্নাঘরে নতুনের ছোঁয়া
ঘর সাজানোর সময়ে এই জায়গাটা বড্ড অবহেলা করি আমরা। ড্রয়িংরুম, বেডরুমে যতটা নজর দিই, ততটা কখনওই দিই না কিচেনে। অথচ নিজেকে ভাল রাখতে গেলে এই কিচেনের ভূমিকা অপরিসীম। সুন্দর কিচেনে মনও সুন্দর থাকে। তাই পুজোর আগে পুরনো বাসনগুলো এই কটা’দিন সরিয়ে রাখুন। শৌখিন বাসন যেগুলো সারা বছর ব্যবহার করেন না, পুজোর সময় সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন। আত্মীয় স্বজনের সামনে এমন কিছু ব্যবহার করলে অনেকেরই নজর কাড়বে। ধুয়ে মুছে রাখুন কৌটোবাটা। গুছিয়ে নিন তাকগুলো। একটা নতুন আমেজ আসবে মনে।
রঙিন পর্দার সাজ
পুরনো পর্দাগুলো খুলে ফেলুন পুজোর আগে। ঘরে যদি আর এক সেট নতুন পর্দা থাকে সেটা লাগিয়ে নিন। ঘরের রঙের সঙ্গে কনট্রাস্ট কালারের পর্দা লাগালে প্রাণবন্ত লাগে।
ফেয়ারি লাইটসের ডেকরেশন
দীপাবলির মত এই সময়ও ফেয়ারি লাইটস দিয়ে ঘর সাজাতে পারেন। শোবার ঘরে, দরজার দু’ধারে, বাড়ির গেটে, বা গোটা বাড়িটাকেই দিতে পারেন আলোর সাজ। সেই আলোর ছোঁয়ায় আপনার মন মেতে উঠবেই।
ব্যালকনির সাজ
চার দেওয়ালের বাইরে বেরিয়ে ব্যালকনিতে বসে সময় কাটান কিছু ক্ষণ। ফ্রেশ এয়ার মন, শরীর দুইয়ের জন্যই উপকারী। ব্যালকনির চারপাশ সাজিয়ে নিন পাতাবাহারি গাছে।
বেডরুমের সাজ
নতুন রঙিন বিছানার চাদর পেতে রাখুন শোওয়ার ঘরে। ছিমছাম রাখুন। ঘরের জানালা মাঝে মধ্যেই খুলে রাখুন যাতে বাইরের আলো-বাতাস ঠিকভাবে চলাচল করতে পারে।
একরঙা দেওয়ালের সাজ
ঘরের ফাঁকা দেওয়ালগুলো ভরিয়ে তুলুন এই সময়। দুর্গা ঠাকুরের পেইন্টিং বা ডোকরার মূর্তি রাখতে পারেন। তাতে পুজো পুজো ভাব চলে আসবে ঘরে।