সফ্ট টয়েজের হাত ধরেই দিশাহারা জীবনকে গড়ে নিয়েছেন জয়তী, পথ দেখাচ্ছেন অনেককে
টেডি বিয়ার। নাম শুনলেই সকলের মুখে হাসি ফুটতে বাধ্য। লাল-নীল-হলুদ-গোলাপি রংবাহারি সফট টয় দেখে খুশি হন না এমন বোধহয় কেউই নেই। বিভিন্ন সময়ে প্রিয়জন কিংবা কাছের মানুষকে টেডি বিয়ার উপহারও দিয়ে থাকেন অনেকেই। বাচ্চা থেকে বুড়ো টেডি বিয়ার পছন্দ সকলের।
আর এই সফট টয় বিশেষ করে টেডি বিয়ারই রুজিরুটি জুগিয়েছে শ্যামনগরের জয়তী নাথকে। আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ের মতো পড়াশোনা করে চাকরি করার স্বপ্ন দেখতেন জয়তী। কম্পিটার নিয়ে পড়াশোনা করে চাকরিও শুরু করেছিলেন। তবে সুখ বেশিদিন সয়নি। ২০০৪ সালে আচমকাই সেরিব্রাল অ্যাটাক হয় জয়তীর বাবার। সংসারের সব সামলে চাকরিটা আর করা হয়নি তাঁর। সেই থেকেই শুরু জীবন সংগ্রাম।
বিউটিশিয়ানের কোর্স করেন জয়তী। শুরু করেছিলেন শাড়ির বুটিক। কিন্তু কোনওটাই সেভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি। নিত্যদিন লড়েছেন তিনি। বারবার ভেবেছেন কীভাবে সুরাহা করবেন সাংসারিক সমস্যার। জয়তীর কথায়, “বাবাকে নিয়ে দৌড়াদৌড়ি লেগেই থাকত। মায়ের সবটা সময় চলে যেত বাবার পিছনে। সংসারের খুঁটিনাটি সবই আমি দেখতাম। সামাল দিতে পারছিলাম না সবটা। অনেক কিছুই শুরু করছিলাম। তবে ঠিক ভাবে এগোচ্ছিল না কিছুই।“
কিন্তু হাল ছাড়েননি জয়তী। হাজার বাধা-বিপত্তি এলেও দমে যাননি। আর তাই আজ তিনি প্রতিষ্ঠিত এবং সফল। নিজের পাশাপাশি অন্যান্য মেয়েদের স্বনির্ভর করার স্বপ্নও দেখেন। হাতের কাজের প্রতি ন্যাক ছিল বরাবরই। ২০১০ সাল থেকে তাই সফট টয় তৈরির কাজ শেখা শুরু করেন জয়তী। তখন একটা দোকানের জন্য কাজ করতেন তিনি। আর আজ জয়তীর তৈরি সফট টয়, টেডি বিয়ার পৌঁছে যায় ১০ থেকে ১২টা দোকানে। বড় বাজারেও সফট টয় পাঠান জয়তী। পাইকারি হিসেবে সরবরাহ করেন টেডি বিয়ার ও আরও অনেক কিছু।
দেখুন জয়তীর লড়াই।
পরিশ্রমের ফসল পেয়েছেন হাতেনাতে। একসময় হেঁটে হেঁটেই বস্তায় পুতুল ভরে দোকানে দোকানে যেতেন জয়তী। পাশে সবসময় থাকতেন মা। তবে এখন একটা স্কুটি রয়েছে জয়তীর। তাতে চড়েই বস্তা বেঁধে নিয়ে দোকানে দোকানে জিনিস পৌঁছে দেন তিনি। নিজের ব্যবসার পাশাপাশি বাড়ির নীচে ছোট্ট একটা দোকানও খুলেছেন তিনি। অনেক মেয়েদের সফট টয় তৈরির কাজও সেখান জয়তী। বিনা পারিশ্রমিকে ওদের সব কাজ হাতে ধরে শিখিয়ে দেন তিনি। লক্ষ্য একটাই নিজের মতো ওদেরকেও স্বনির্ভর করা।
আগেও বিভিন্ন মেয়েদের ক্রিস্টালের ব্যাগ তৈরি, শাড়িতে কাজ করা শিখিয়েছেন জয়তী। এখনও সফট টয় তৈরির ফাঁকে ফাঁকে অন্যান্য হাতের কাজও শেখান মেয়েদের। জয়তী বলছেন, “পুজোর পর একটা কারখানা তৈরির ইচ্ছে আছে। যেখানে এই মেয়েদের কাজ শেখাবো। ওরা কাজ শিখে নিজেরাই ব্যবসা করতে পারবে। আমি কোনওদিন ব্যবসা করব ভাবিনি। পুঁজিই ছিল না। কিন্তু পরিশ্রম করেছি। সফলও হয়েছি। তাই ওরাও পারবে।“
[…] পড়াশোনা করে চাকরি করার স্বপ্ন দেখতেন জয়তী নাথ। কম্পিটার নিয়ে পড়াশোনা করে চাকরিও […]